জেনে নিন , শিশুর গায়ে সরিষার তেল মাখা কতটুকু স্বাস্থ্যকর !

জেনে নিন , শিশুর গায়ে সরিষার তেল মাখা কতটুকু স্বাস্থ্যকর !

নবজাতকের পরিচর্যা প্রত্যেক মায়ের জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যাঁরা নতুন মা হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে। নবজাতকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন কোন এটি অন্তর্ভুক্ত?শিশু জন্মের পর মা বা পরিবারের লোকজন তার যত্নআত্তি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। দুধ খাওয়ানো, গোসল করানো, পায়খানা-প্রস্রাব ঠিকমতো হলো কি না—এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে তাদের মনের ভেতর।
প্রথমেই যে প্রসঙ্গটি আসে, একটি বাচ্চা প্রসবের পর মায়ের খুব চিন্তা হয় বাচ্চা কী খাবে? খাওয়ার এটি প্রথমে বলতে চাই। প্রথমেই মায়ের শাল দুধ বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাকে ঘন ঘন দুধ খাওয়ালে খুব দ্রুত মায়ের দুধের উৎপাদন বাড়বে।
২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ তেমনভাবে উৎপাদন হয় না। দুধ সেভাবে আসে না। তখনই আমাদের দেশে যে এটি হয়, বাইরের দুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। সে জন্য যেটা প্রয়োজন, সঠিক নিয়মে বারবার মায়ের দুধ যদি টানানো যায়, তাহলে দুধ আসবে। সে ক্ষেত্রে মায়ের মস্তিষ্কে একটি সংকেত যাবে দুধ তৈরি করার জন্য। প্রথমে এই সংকেত থাকে না। শিশু যখন দুধ চোষে, সে সময় মস্তিষ্কে সংকেত যায় এবং দুধ তৈরি হয়। তখন হতাশ হয়ে যাওয়া চলবে না।
অনেক সময় দেখা যায়, মায়ের দুধের পরিবর্তে অন্য কিছু খাওয়ায়। মায়ের দুধের পরিবর্তে অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। মায়ের শাল দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি অসুখ থেকে সুরক্ষা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ মুখে মিসরি দিয়ে দেয় বা মধু দিয়ে দেয়; এটি আসলে ঠিক নয়। এতে শিশুর দুধ চোষার এটি কমে যায়। শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
শাল দুধে প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম; সেটি সবাই জানি। এই শাল দুধ কখন আসবে এবং দেখে কীভাবে বোঝা যাবে এটি শাল দুধ?
শাল দুধ একটু হলুদ রঙের থাকবে, ঘন হবে। সেটিই প্রথম খাওয়াতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাল দুধ আসতে থাকবে। পরে দেখা যাবে সাদা দুধটি চলে আসছে।
নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধ প্রধান খাবার। তবে কখনো কখনো দেখা যায় তাকে হয়তো পানি বা বাড়তি কিছু দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন?
ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে শিশুর যে বন্ধন রয়েছে, এটিও ভালো হবে। এ ছাড়া জীবাণু থেকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা শিশু মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে পেয়ে থাকে।
নবজাতকের প্রস্রাব-পায়খানার এটি নিয়ে মা-বাবারা খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুটি হয়তো ঘনঘন পায়খানা করছে। আসলে একটি নবজাতক বা একটি বাচ্চার কী রকম হারে প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া উচিত?
যতবারই শিশু বুকের দুধ খাবে, ততবারই প্রস্রাব করবে। জন্মের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেহেতু কম দুধ পেয়ে থাকে, সেহেতু কম প্রস্রাব করতে পারে। এটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। শিশু জন্মের পাঁচ দিন পর থেকে শিশু ১০ থেকে ১২ বার প্রস্রাব করে থাকে। পায়খানার এটিও তাই। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যে পায়খানাটি হয়, সেটির রং কালো থাকে। একে সাধারণত মিকোনিয়াম বলে থাকি। এই মিকোনিয়াম সাধারণত দুই দিন পর থেকে হলুদাভ হয়। একেকটি শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম বিষয় থাকে। দেখা যায়, কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে, মায়ের দুধ যারা খায়, একবার দুধ খেল, একটু পায়খানা করল। একে সাধারণত গ্যাসট্রোকলিক রিফ্লেক্স বলি। এটি খুব স্বাভাবিক। অনেক মা খুব চিন্তিত থাকেন এটি নিয়ে। ভাবেন, সম্ভবত শিশুর ডায়রিয়া হয়ে গেছে। বিশেষ করে এক মাস বয়সে যখন এগুলো হয়।
শিশুদের মলত্যাগ করার প্রক্রিয়া একেকটি শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। যারা মায়ের দুধ খায়, তাদের এক রকম যারা; ফরমুলা দুধ যারা খায়, তাদের এক রকম। সাধারণত মায়ের দুধ যারা খায়, দেখা যায় কোনো কোনো শিশু ৮ থেকে ১০ বার করে পায়খানা করে। যতবার সে মায়ের দুধ খাবে, ততবারই সে পায়খানা করতে পারে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো শিশু সপ্তাহে একবার বা দুবার পায়খানা করে। এক মাস পর থেকে দেখা যায়, এই পরিবর্তনগুলো আসে। প্রথমে এই পরিবর্তনগুলো হয় না। পরে এই পরিবর্তনগুলো শুরু হতে থাকে। তখন মায়েরা চিন্তিত হয়ে যান, এক মাস ধরে তো শিশুটি নিয়মিত পায়খানা করত, এখন কেন এমন হচ্ছে? আসলে বলা যায়, বুকের দুধ কোনো শিশুর দ্রুত হজম হয়ে যায়, ফলে পায়খানা তৈরিও কম হয়। এবং শিশুরা পায়খানাও কম করে। সে ক্ষেত্রে সাত দিনে যদি একবার করে সেটাও স্বাভাবিক, আবার সাত দিনে যদি আট-দশবার করে সেটিও স্বাভাবিক। আবার অনেক শিশু দেখা যায়, দুই-তিন দিন পরপর পায়খানা করে, সেটিও স্বাভাবিক। এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
তাহলে চিন্তার বিষয় কখন হবে
চিন্তা তখনই করবে, যখন একই ধরনের হয়তো পায়খানা করত হঠাৎ করে তার পরিমাণ বেশি হলো, পায়খানার রংটি হলুদ থেকে বাদামি বা লাল হয়ে যাচ্ছে। রক্ত আসছে পায়খানা থেকে। তখন তার আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, প্রস্রাব কয়বার করছে। পায়খানার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রস্রাবও ঠিকমতো করে, তবে সেটা নিয়ে চিন্তা করব না। তবে যদি দেখি, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে বাচ্চার পানিশূন্যতা হচ্ছে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় নবজাতকের গোসলের এটি নিয়ে অনেকে খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন, আসলে কখন গোসল করানো উচিত এবং কীভাবে করাতে হবে?
আসলে নাভিটি পড়তে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। বলা হয়, নাভিটা শুষ্ক রাখাই ভালো। তখন গোসল না করিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে। আমরা বলি, কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দেবেন। নাভির অংশটি যেন শুষ্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে। এর পর যখন নাভি পড়ে যাবে, তখন দেড় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে সপ্তাহে দুদিন গোসল করাবে। প্রতিদিন করানোর প্রয়োজন নেই। তিন দিন পরপর একদিন গোসল করবে। আর বাকি দিনগুলোতে গা মুছিয়ে দিতে হবে। শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজারে যে বেবি শ্যাম্পু বা সাবান পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে তাকে গোসল দিতে হবে।
এর পর আসে তেল দেওয়ার এটি। এ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত বলে থাকি, শিশুর দেড় মাস হওয়ার আগে তেল না দেওয়াই ভালো। কারণ শিশুদের ত্বক পাতলা থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের র‍্যাশ হয়। এ সময় তেল দিলে অনেকের ক্ষেত্রে র‍্যাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বলি, দেড় মাস পরে তাকে তেল, লোশন দেওয়া যাবে। গোসলের আগে তেল দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে হবে।
আমরা আগে দেখতাম, মা-খালারা গোসলের পর সরিষার তেল গায়ে মেখে রোদে দিয়ে রাখতেন। শিশুকে সরিষার তেল বারবার দেওয়া খুব কি যৌক্তিক?
আসলে সরিষার তেল দিতে আমরা নিষেধ করি। কারণ, এটি খুব পুরু থাকে। এর জন্য র‍্যাশ হয়। বাচ্চার শরীর ময়লা হয়ে যায়। সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরিষার তেলের ঝাঁজ বেশি। আমরা সাধারণত বলি, সরিষার তেল না দেওয়াই ভালো। যদি বেবি অয়েল দিই বা অলিভ অয়েল দিই, সেটা দেওয়া যাবে। তবে সেটাও দেড় মাসের পরে।
একটা জিনিস আমরা দেখি, শিশুটির জন্মের পর খুব দ্রুত নানি-দাদিরা সাবান দিয়ে মেজে তার গোসল দিচ্ছে, সেটি আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আসলে মায়ের শরীরে একটি সুরক্ষা দেওয়ার ফ্লুইড থাকে, যাকে এমনিওটিক ফ্লুইড বলি। এর পর তার ওপর আরেকটি লেয়ার থাকে, যাকে ভারনিক্স ক্যাসোসো বলে। সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। জন্মের ছয়-সাত দিন পর এটি এমনিতেই চলে যাবে। আস্তে আস্তে শিশু নড়াচড়া করতে শুরু করলে এটি পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজেই একে ঘষে পরিষ্কার করলে রোগ-জীবাণুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এটা না করাই ভালো।
মধুর মতো মিষ্টি যাতে হয় তার কণ্ঠস্বর, এ জন্য মধু দিয়ে খাবার শুরু করে। এটি কি খুব বেশি জরুরি?
মধু না দিলেই ভালো।
নবজাতকের নাভির পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া দরকারঃ
নাভি শুষ্ক রাখতে হবে। নাভি ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যাবে। আগে বলা হতো, স্যাভলন বা অ্যান্টিস্যাপটিক এগুলো ব্যবহারের জন্য। তবে এখন বলা হয়, কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি কোনো কারণে নাভির চারদিকে লাল হয়ে যায়, নাভি ফুলে যায় তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আরেকটি স্বাভাবিক বিষয় হলো, অনেক শিশুর নাভি ফোলা থাকে, তখন মায়েরা চিন্তায় পড়ে যান। নাভি কেন ফুলে যাচ্ছে? এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এক বছর বয়স হতে হতে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এ ছাড়া দেখা যায়, তিন থেকে চার দিন বয়সে অনেক শিশুর বিলুরুবিনের মাত্রাটা বেড়ে যায়, জন্ডিস হয়। অনেক মা এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। এটা আসলে খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এটা বড়দের জন্ডিসের মতো নয় যে চিন্তা করতে হবে।
বিলুরুবিনটা কত বেশি হলে সেটি চিন্তার বিষয়?
সব শিশুরই জন্ডিস হবে, তবে সেটি কম আর বেশি। দেখা যায়, তিন থেকে চার দিনে জন্ডিস বাড়ে। আবার ছয়-সাত দিনে কমে যায়। সেসব শিশুর এর পরও না কমে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হলে ফটোলাইট দিয়ে চিকিৎসা করি। এর বেশি হলে অনেক সময় রক্ত পাল্টানোর মতো পরিস্থিতি হয়।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline