উচ্চশিক্ষার তৎকালীন ভারতীয় রূপ দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, যেখানে বিশ্ব-বিদ্যা-লয় পায়, এরই নাম বিশ্ববিদ্যালয়। ভাগ্যিস, রবীন্দ্রনাথ এখন জীবিত নেই। থাকলে আমাদের ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’-এর শিক্ষা কার্যক্রম দেখে মনের দুঃখে তিনি নিজেই হয়তো ‘লয়’ হয়ে পড়তেন।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে জাতি-বিশ্ব-বিদ্যা-আলয়_ এই চতুর্মাত্রিক ব্যঞ্জনা জড়িত, সেটি না করে কোনো শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীর মনে না জাগায় জ্ঞান-অর্জনের কোনো স্পৃৃহা। এর কাজ কেবল ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা, ছকবাঁধা পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও বিতরণ, খেয়াল-খুশিমতো পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা এবং চন্দ্রালোকিত সনদ বিতরণ করে যাওয়া।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যার নিজেরই নেই সুসংবদ্ধ কাঠামো, নেই সুশৃঙ্খলা বা জ্ঞান-প্রজ্ঞার দীপ্তি; বছরের পর বছর সেটিই কি-না নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে শত শত শিক্ষাঙ্গনের উচ্চশিক্ষার নানাবিধ ধাপ বা পর্যায়। সাধ্যাতীত বোঝা কাঁধে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিয়ত তালগোল পাকাচ্ছে। সমস্যার অথৈ দরিয়ায় কেবলই খাবি খাচ্ছে। বস্তুত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট বৃত্তে আবর্তিত একক-স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটি অগণিত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক, অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের খুব কাজ নেই। তার হয়ে ভর্তি, পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ সিংহভাগ কাজ করে তার অধিভুক্ত কলেজগুলো। তার হয়ে যারা জটিল কাজগুলো করে, তাদেরকে সামান্য আমলে না নিয়ে, পাঠ্যক্রমের কতটুকু পড়ানো হয়েছে আর কতটুকু বাকি আছে, এর কোনো খোঁজখবর না নিয়েই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় খেয়াল-খুশিমতো পরীক্ষা অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করে। যেন পরীক্ষার সঙ্গে সিলেবাস শেষ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। পরীক্ষা একটা মামুলি ব্যাপার; যখন-তখন তা গ্রহণ করা যায়। বস্তুত, এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষা যে ছেলেখেলা হয়ে গেছে_ এটা বোঝা যায় সব শ্রেণীর শিক্ষাবছরের ব্যাপ্তি (সেশনকাল) কমিয়ে আনার পরও উত্তম ফলের উল্লম্ফন মাত্রাবৃদ্ধি দেখে। আমাদের দেশের ছোট-বড় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষে পরীক্ষা নেওয়া হয় বা পরীক্ষার আগে তড়িঘড়ি করে পাঠ শেষ করা হয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই দুয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ককে আমলে নেয় না।
2 responses on "জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রশ্ন"