চুল পড়ার কারণ ও চিকিৎসা
গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত। বাবা কিংবা মা অথবা দু’জনের কাছ থেকে আগত জিনই নির্ধারণ করে দেয় কখন আমাদের চুল পড়বে। এ অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষদের হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী।
গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, চুল পড়ার জন্য চুলের গোড়ার বা ফলিকলে একটি এনজাইম তৈরি হয়, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ। এই এনজাইম রক্তে বাহিত হরমোন টেস্টেস্টেরনকে ডাই হাইড্রোটেস্টস্টেরনে পরিণত করে। যার আরেক নাম ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের গোড়ায় আক্রমণ চালায় এবং চুল দুর্বল করে ঝরে পড়তে সাহায্য করে। পুরুষদের চুল সাধারণ সামনের দিকে পড়ে এবং টাকে পরিণত হয়। আর মহিলাদের পুরো মাথার চুলই এককভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। মহিলাদের শরীরে অ্যারোমাটেজ নামে এক প্রকার এনজাইম তৈরি হয়, যেটি ডিএইচটিকে অ্যাস্ট্রোজেনে পরিণত করে। এতে কিছু হলেও মহিলাদের চুল রক্ষা পায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল। চুল পড়া রোধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য মাথায় অনেক সময় নানারকম ভিটামিন ও ভেষজ নির্যাসযুক্ত তেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাকোনিয়ান পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চুলের গোড়ায় মৃদু ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। এতে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করা হয়। কিছু কিছু শ্যাম্পু ও জেল ব্যবহারে চুল ঘন দেখায়। বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন এসব দ্রব্য চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে।
মিনোক্সিডিল নামক ওষুধ চুল পড়া রোধে ও পুনর্বার চুল গজাতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি মূলত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ। টাক মাথায়ও এটা ব্যবহারে সুফল পাওয়া গেছে। তবে এটা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয় বলে দেখা গেছে। চুল পড়া শুরু হওয়ামাত্র এই ওষুধ ব্যবহার শুরু করলে পুরুষদের ক্ষেত্রেও ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এটা কিছু দিন ব্যবহার করলেই মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানি হতে পারে। আর যাদের হৃদরোগ আছে তাদের জন্য এটা না ব্যবহার করাই ভালো। মিনোক্সিডিল যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সরবরাহের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। আর ব্যবহার বন্ধ করলেই কয়েক মাসের মধ্যে আবার চুল পড়া শুরু হয়। আজকাল সার্জারির সাহায্য নেয়া হচ্ছে, যাকে বলা হয়, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন। এটা হচ্ছে একটা সার্জারির মাধ্যমে মাথার যে অংশে চুল বেশি, বিশেষ করে পুরুষের মাথার পেছনের দিকের চুল রয়েছে সেখানকার চুল তুলে এনে ফাঁকা জায়গায় বা টাকে বসিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটার জন্য কয়েকবার সার্জারি করতে হয়। আর এতে মাথায় দাগ থেকে যেতে পারে কিংবা যেখানে ঘন চুল ছিল সেখানকার চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। এটিও ব্যয়বহুল।
এ ছাড়া আরেকটি সার্জারি করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় স্কাল্প রিডাকশন। এতে মাথার টাকের অংশ কেটে কমিয়ে ফেলা হয়। অর্থাৎ আপনার মাথায় যদি একসাথে স্কাল্প রিডাকশন এবং হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় তবে বেশ একমাথা ঝলমলে চুল দেখাবে। কিন্তু এসব অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণও বটে।
চুলের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণের আগেই আমরা চুলের কিছু নিজস্ব যত্ন নিতে পারি। প্রতি এক দিন অন্তর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। অবশ্যই সেই শ্যাম্পু দিয়ে, যেটি আপনার চুলের জন্য উপযোগী। বন্ধুবান্ধবের কথায় বা চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ না হয়ে নিজের উপযোগী শ্যাম্পু বেছে নেয়া ভালো।
লেখিকা : সহযোগী অধ্যাপিকা, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।
চেম্বার : দি বেস্ট কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ২০৯/২ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৮২২০১৪২৭
0 responses on "চুল পড়ার কারণ ও চিকিৎসা"