গেরিলা সংগঠন সমাচার
#পিএলও #ফাতাহ #ব্লাক সেপ্টেম্বর #ফোর্স_সেভেন্টিন #হামাস – এ সবকয়টিই ফিলিস্তিনের গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন।
.
সংক্ষেপে এসব সংগঠনের ইতিহাস জানতে নিচের লেখাটি পড়তে পারেন:–.
.
#PLO-একটি ফিলিস্তিনের গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন। এটি ১৯৬৪ সালের ২৮মে প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ঐতিহাসিক ভবন Orient House এ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পিএলওর সদরদপ্তর ছিল তবে বর্তমানে এর সদর দপ্তর রামাল্লা শহরে। ১৯৭৪ সালে পিএলও জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষণের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৯১ সালে মাদ্রিদ কনফারেন্সর শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়া পর্যন্ত এটি উগ্র গেরিলা সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিল।কিন্তু ১৯৯৩ সালে এক ঐতিহাসিক অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইজরাইল ও পিএলও পরস্পরকে স্বীকৃতি দান করে।
১৯৯৫ সালে পিএলও ও ইজরাইলের মধ্যে অারেকটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ফলে ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীরে সীমিত অাকারে ফিলিস্তিনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি (পিএনএ) রামাল্লাকে প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
.
তবে এই শান্তি প্রক্রিয়ার সব কৃতিত্ব কিন্তু ১৯২৯ সালে মিশরে জন্ম নেওয়া ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির অারাফাতের। যিনি ১৯৫৯ সালে ফিলিস্তিনে #ফাতাহ(Fatah) নামে একটি রাজনৈতিক অান্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন যেটি পরে ১৯৬৫ সালে একটি রাজনৈতিক দলে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকালীন এই দলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইয়াসির অারাফাত নিজে তবে বর্তমানে এই রাজনৈতিক দলের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ অাব্বাস। সবচেয়ে বড় কথা ফাতাহের একটি সম্মেলিত বৃহৎ পরিসরের রাজনৈতিক অান্দোলনের নাম হলো পিএলও। যেটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬৯ সালে ইয়াসির অারাফাত পিএলওর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর পিএলও জর্ডানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ফলে জর্ডানে সেনা অভ্যুদয় ঘটে এবং জর্ডানের অার্মি ও রাজা হোসেনের নেতৃত্বে পিএলওর সেনাদের সাথে ১৯৭০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হতে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় যেটি ইতিহাসে ব্লাক সেপ্টেম্বর যুদ্ধ নামে খ্যাত । যুদ্ধে জর্ডান জয় লাভ করে।এই ব্লাক সেপ্টেম্বর যুদ্ধে জর্ডান পিএলওর অনেককে হত্যা করে এবং অনেক নেতাকে লেবাননে বিতারিত করার মাধ্যমে জর্ডান পুনরায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এই পরাজয় পিএলও মেনে নিতে পারেনি তাই এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পিএলওর অন্যতন সহযোগী ফাতাহ দলের একটি বিশেষ বিদ্রোহী শাখা গঠন করা হয় যেটি ইতিহাসে #ব্লাক সেপ্টেম্বর গেরিলা দল নামে পরিচিত।
.
সেই সাথে #ফোর্স_সেভেন্টিন( Force 17) নামে ফাতাহ দলের অারেকটি বিশেষ শাখা গঠন করা হয় যেটি মূলত ইয়াসির অারাফাতের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিল বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনের ‘Presidential Guard হিসেবে কাজ করে থাকে।
.
#১৯৮৭ সালে ফাতাহ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শেখ অাহমেদ ইয়াসিন ও মাহমুদ জাহার মিলে ফিলিস্তিনের শহর গাজায় ‘#হামাস’ নামে অারেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা করে। অারাফাতের মৃত্যুর পর ফাতাহ এর সাথে হামাসের রাজনৈতিক মতাদর্শ বিরোধী চরমে উঠে এবং বর্তমানে হামাস একটি উগ্র রাজনৈতিক গেরিলা সংগঠন হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।
.
তবে যাই হোক এটা দিনের অালোর মত সত্যি যে ফিলিস্তিনের অারেক নাম হলো ইয়াসির অারাফাত যিনি ফিলিস্তিনের জনগণের মাঝে চেতনার এক মহা ‘ইন্তিফাদা’ বা জাগরণ ঘটিয়েছিলেন।চেষ্টা করেছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠার। তাঁর শান্তি প্রক্রিয়ার এই অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবল পুরস্কারে ভূষিত হন।
তবে ইজরাইলের গোয়েন্দা সংগঠন মোসাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে ২০০৪ সালে প্যারিসে তাঁর জীবনাবসান ঘটলে অারাফাতের প্রাণকেন্দ্র ফিলিস্তিনের প্রশাসনিক রাজধানী রামাল্লায় তাঁকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।