📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

গুগল: সামান্য গ্যারেজ থেকে শুরু করে যেভাবে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো

গুগল: সামান্য গ্যারেজ থেকে শুরু করে যেভাবে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো

“গুগল” এর শুরুটা হয়েছিল একটি গ্যারেজে। সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল। সে সময় ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন। তারা দুজন মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তারা এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করবেন যেটি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে ফলাফল বের করে আনবে।
 
 
গুগলের নামকরণ নিয়েও রয়েছে মজার ঘটনা:
প্রাথমিকভাবে ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন তাদের কোম্পানির নাম রাখেন ‘ব্যাকরাব’। পরবর্তীতে এই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গুগল। তবে আজ আমরা যেই গুগলকে চিনি ও জানি যদি ভুল না হতো তাহলে সেটি আজ আমাদের কাছে “GOOGOL” নামেই পরিচিতি পেত। পরিকল্পনা গ্রহণের ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন গুগল ডট কম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন করেন। কিন্তু তারা যেই ডোমেইনটি নিবন্ধন করতে চেয়েছিলেন সেটি না হয়ে ভুলবশত নিবন্ধিত হয় “Google” নামে। এ নিয়ে অবশ্য সে সময় তারা খুব মনোকষ্টে ভুগেন। Google শব্দের মানে যেটা দাঁড়ায় সেটা হলো এমন একটা অঙ্ক যেটা ১০ এর উপর একশ পাওয়ার!  10^100 = 10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000, 000,000,000, 000,000,000, 000,000, 000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000, 000,000.
 
গুগলের পরবর্তী পথ চলা
দেখতে দেখতে গুগল ২০১৩ সালে তাদের ১৫ তম জন্মদিন পালন করলো। কিন্তু ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন ১৯৯৬ সালে এবং ডোমেইন নিবন্ধন করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। সে হিসেবে তাদের ১৬ কিংবা ১৭ তম জন্মদিন পালন করার কথা। কিন্তু ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগলকে প্রাইভেট কোম্পানী হিসেবে গুগল প্রকল্প প্রথম ইনকর্পোরেট করেন ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ায়। সে হিসেবেই গুগলের জন্মদিন হিসাব করা হয়। এসময় গুগল কোম্পানীর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়।
 
আগেই বলেছি গুগলের শুরুটা হয়েছিল একটি গ্যারেজে। এটি ছিলো সান্তা মার্গারিটা এভিনিউ- মেনলো পার্ক ক্যালিফর্নিয়ার সুসান ওজচিক্কির গ্যারেজ। সুসান এখন গুগলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। নিচের ছবিগুলো সেই গ্যারেজের।

 
গুগলের ১ম কর্মচারী ছিলেন ক্রেইগ সিলভারস্টেইন। ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন দুজন সম্মিলিতভাবেই তাকে নিয়োগ দেন। নিচের ১ম ছবিটি সে সময়ের যখন তিনি গুগল – এ যোগ দেন এবং ২য় ছবিটি বর্তমান সময়ের।

 
জনপ্রিয় হতে গুগলকে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় নি। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ‘পিসি ম্যাগাজিন’ এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী ইনকর্পোরেট হওয়ার মাত্র চার মাসের মধ্যেই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল পরিচিতি পায়। ভাবা যায় মাত্র চার মাসের মাথায় সফলতা!!!
 

১৯৯৮ সালে গুগলের হোম পেজ এরকম ছিল।
 
গুগলের প্রাথমিক মূলধন যেভাবে সংগৃহীত হয়েছিল:
১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বন্ধুর গাড়ির গ্যারেজে, ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে গুগলের যাত্রা শুরু হয় তখন  দুই বন্ধুর টাকা ছাড়াও এই সময়  তাদের পাশে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি পেজ আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গুগলে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করে। আর ২০০৪ সালে ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার জোগাড় করে! বিনিয়োগকারীরা যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ হলো, মাত্র তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!
 
অফিস পরিবর্তন:
সান্তা মার্গারিটা এভিনিউ- মেনলো পার্ক ক্যালিফর্নিয়ার সুসান ওজচিক্কি গ্যারেজ ছেড়ে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গুগল এর অফিস ১৬৫ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ- পালো আল্টো তে স্থানান্তর করা হয়। এসময় গুগলের কর্মচারী সংখ্যা ছিলো মাত্র আট জন। নিচের ছবিতে গুগলের নতুন অফিস দেখা যাচ্ছে।

 
 
কর্মচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি:
১৯৯৯ সালের এপ্রিলে Urs Hölzle সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ অপারেশনস পদে যোগ দেন। গুগলে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যে কাজ করতে তার পোষা ওশকা নামের একটি কুকুর নিয়ে আসেন। নিচের ছবিতে তা দেখা যাচ্ছে।

 
একই বছরের মে মাসে Omid Kordestani   সেলস সেকশনে গুগলের এগার তম কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন।

Omid Kordestani
ধীরে ধীরে গুগলের কর্মচারীর সংখ্যা ৪০ এ দাঁড়ায়। ১৯৯৯ সালে গুগলের কর্মচারীদের ছবি।

 
পুনরায় অফিস পরিবর্তন:
৩৬৭ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ- পালো আল্টো তে মাত্র সাত মাস অফিস পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে সেখান থেকে অফিস স্থানান্তর করে ২৪০০ বায়শোরি (2400 Bayshore) তে মাউন্টেন ভিউ এ চলে আসে। মাউন্টেন ভিউ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক মাইল দক্ষিণে ও সিলিকন ভ্যালিরপুরোনো শহরগুলো- সানিভেল, সান্টা ক্লারা, সান জোসে থেকে উত্তরে অবস্থিত।

 
পরবর্তী সময়ে গুগল:

  • ২০০৪ সালে সার্চ ইনডেক্স নম্বর ৬০০ কোটির সীমানা অতিক্রম করে, যেখানে ৪২৮ কোটি ওয়েবসাইট ও ৮ দশমিক ৮ কোটি ছবি ছিল। অর্কুট নামে চালু করা হয়। এপ্রিলের ১ তারিখে জিমেইল চালু হয়। তবে সে সময় অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হলে অন্য ব্যবহারকারীর কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেতে হতো। শেয়ারবাজারে গুগল তার শেয়ার ছাড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গুগল তার অফিস চালু করে।
  • ২০০৫ সালে যে নতুন সেবাগুলো চালু করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে গুগল ম্যাপ, গুগল আর্থ, ওয়েব সার্চ হিস্ট্রি, গুগলটক, গুগল রিডার, গুগল অ্যানালাইসিস। একই সঙ্গে ব্লগার ও জিমেইলের মোবাইল সংস্করণ চালু করা হয়।
  • ২০০৬ সালে পিকাসা, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ডক চালু করা হয়। ইউটিউব ও স্কেচআপ কেনার ঘোষণা দেওয়া হয় এ বছর।
  • ২০০৭ সালে গুগলের পক্ষ থেকে ইউটিউব সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। গুগল আর্থে স্ট্রিট ভিউ ও স্কাই নামের নতুন সেবা যুক্ত করা হয়।
  • ২০০৮ সালে ১০ ভাষায় গুগল ট্রান্সলেটর চালু করা হয়। গুগল সাইট ও জিমেইল ল্যাবস ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ বছর গুগল ক্রোম নামের একটি ওয়েব সাইট দেখার সফটওয়্যার প্রকাশ করে। নতুনভাবে পিকাসা প্রকাশ করা হয়।
  • ২০০৯ সালে গুগল আর্থে মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য গুগল ল্যাটিচিউড চালু করা হয়।

 

সের্গেই বিন এর ছোটবেলার ছবি

ল্যারি পেজ এর ছোটবেলার ছবি

সস্ত্রীক ল্যারি পেজ ও সের্গেই বিন

 
এক সময় গুগল বিক্রি হয়ে যেতে বসেছিলো:
গুগল যখন ছোট পরিসরে ছিলো তখন ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগলকে ইয়াহুর কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলো। সে সময় ইয়াহুর সিইও ছিলেন সেমেল (Semel)। একদিন ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন ইয়াহুর সিইও এর সাথে ডিনারে একত্রিত হন। ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগলের মূল্য নির্ধারণ করেন ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেমেল সেসময় তাতে রাজি হননি। পরবর্তীতে সেমেল ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গুগল কিনতে রাজি হন এবং এ উদ্দেশ্যে তারা আবার ডিনারে একত্রিত হন। সেসময় ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন পুনরায় গুগলের দাম নির্ধারণ করে বলেন গুগল কিনতে হলে তাদেরকে ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করতে হবে। অন্যথায় তারা গুগল বিক্রি করবেন না। সেসময় তাদের মধ্যে আর কোনো কথাবার্তা হয় নি। বর্তমানে গুগল ২০০ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের কোম্পানী এবং ইয়াহু সেই তুলনায় মাত্র ২০ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের কোম্পানী।
 
২০১১ সালে ইয়াহুকে কিনতে চেয়েছিলো গুগল:
গুগল ২০১১ সালে সময়ের শীর্ষ কোম্পানী ইয়াহুকে কিনতে চেয়েছিলো।। অন্তত দুটি কোম্পানীর সঙ্গে কথা হয়েছে এবিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য। ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে এখবর প্রকাশ করা হয়েছিল। সে সময় ইয়াহুর অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। সূত্রমতে গুগল ইয়াহুর সাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন বিক্রি করতে আগ্রহী।  কিন্তু এটি প্রাথমিক পর্যায়েই শেষ হয়ে যায়।
 
গুগল এর মজার কিছু বিষয়:
গুগল যে সবসময় কাজেই ব্যবহৃত হবে এমন তো কোনো কথা নেই। মাঝে মাঝে তো একটু বিনোদনও দিতে পারে। দেখুন নিচের লিংকগুলো দেখুন:
 
www.google.com.hk/intl/zh-CN/landing/shuixia এই লিংকে গেলে আপনি পানির নিচে হাবুডুবু খেতে থাকবেন। এমনকি আপনি যাই সার্চ করবেন সেগুলোও উপর থেকে নিচের দিকে এসে পানিতে ডুবে যাবে। আর যদি নাগড়দোলায় চড়তে চান তাহলে Google এ গিয়ে লিখুন Do a barrel roll, তারপর এন্টার। দেখুন আপনাকে তিন চক্কর নাগরদোলার দোল খাইয়ে নিয়ে আসবে। তাতেও যদি মন না ভরে তাহলে Google এ গিয়ে টাইপ কর Google Sphere এবং এন্টার দিন। দেখবেন আপনার সবকিছুই ঘুরতেছে। আরা যারা গুগলের ভাঙচুর দেখতে চান তারা Google এ গিয়ে লিখুন Google gravity, তারপর এন্টার দেওয়ার পর প্রথম যে লিংকটি আসবে সেটিতে ক্লিক কর বাকিটুকু গুগল-ই আপনাকে করে দেখাবে। আর যদি গুগলকে উল্টাপাল্টা দেখতে চান তাহলে চলে যান এই লিংকে http://elgoog.im/

 
এলিয়নদের জন্যও বিশেষ ভাষা রয়েছে গুগলে:
গুগল এ রয়েছে ৮০ টিরও বেশি বিভিন্ন রকমের ভাষা। এর মধ্যে একটা রয়েছে ‘স্ট্যার ট্রেক’স ক্লিগন’ যেটা কিনা এলিয়েনদের জন্য!
 
গুগলের হোম পেজে বিজ্ঞাপন দিতে হলে ব্যয় করতে হবে ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার:
গুগলের হোম পেজ অর্থাৎ Google.com এ গেলে যে পেজ দেখায় সেখানে কোন বিজ্ঞাপন নেই। যদি সেখানে কেউ বিজ্ঞাপন দিতে চায় তাহলে তাকে ব্যয় করতে হবে ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কিন্তু কোনো এক কারণে গুগল তাদের হোম পেজে কোনো বিজ্ঞাপন দেয় না।
 
গুগল অফিসে এক সময় ভেড়া চড়ানো হয়েছিল:
কেবল দক্ষ কর্মীই নয়, ছাগলও নিয়োগ দিয়ে থাকে গুগল! ২০০৯ সালে তারা ২০০টি ছাগল ভাড়া করে। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ হেডকোয়ার্টারের বড় অংশের জমিতে প্রতি বছরই ঘাস কাটানোর কাজ করানো হয়। ওই বছরে এই কাজের জন্য কোনো ধরনের যন্ত্র ব্যবহার না করে এই কাজে ওই ২০০ ছাগল নিয়োগ দিয়েছিল গুগল!

 
গুগল সদর দপ্তর:
মাউন্টেন ভিউ, সান্টাক্লারা, ক্যালিফোর্নিয়া ঠিকানায় ১৯৯৮ সালে নির্মিত গুগল সদর দপ্তর। এই সদর দপ্তরকে বলা হয় গুগলপ্লেক্স। সারা পৃথিবীতে গুগলের ৬৮টি অফিসে কর্মরত প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর মধ্যে শুধু এই গুগলপ্লেক্সে কাজ করেন ১০ হাজার গুগলার। যারা গুগলে কাজ করেন তাদেরকে বলা হয় গুগলার। ২৬ একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে এই গুগলপ্লেক্স। ২২টি অফিস ভবন রয়েছে এতে। আর পাঁচ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে গণরাস্তা, গাড়ি রাখার জায়গা চার্লসটন অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, বেশ কয়েকটি ভলিবল মাঠ, দুটি সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, লন্ড্রি রুম আরও অনেক কিছু। গুগলপ্লেক্সে রয়েছে ১৮টি পরিপূর্ণ এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারের বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ। তাছাড়া প্রতিটি অফিস ভবনের সবকটি তলায় রয়েছে ‘মিনি কিচেন’।

মাউন্টেন ভিউ এ অফিস স্থানান্তরিত করার পর নভেম্বের মাসে কার্লি আয়েরস কে গুগলের প্রথম চিফ করা হয়।

প্রতি ফ্লোরেই এরকম রেস্তোরা রয়েছে

 
গুগল ক্যাম্পাসে ঢুকলে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি অফিস। অফিস টাইমে কেউ ভলিবল খেলে সময় কাটায়, কেউ কেউ দল বেধে কফি খেতে আড্ডা দিতে থাকে, কেউবা ঘাসের উপর বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। আবার কেউবা গুগল সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

গুগলের নতুন কর্মীদের পরিচয় দাঁড়ায় ‘নুগলার’ অর্থাৎ ইংরেজী শব্দ নিউ ও গুগলার এর মিশ্রণ এবং সাবেক কর্মীদের পরিচয় দাঁড়ায় ‘জুগলার’।
 
গুগলারদের নয়টা-পাঁচটাজাতীয় কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই। অফিসে নেই কোনো নির্দিষ্ট কাজের টেবিল। যে কেউ যেকোনো সময় অফিসে আসতে পারে। যে কেউ তার পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় বসে কাজ করতে পারে। তবে গুগলারকে তার কাজ বা প্রজেক্টের সময়সীমা মাথায় রাখতে হয়।’ কিন্তু গুগলের কর্মীরা কখনোই এই স্বাধীনতা আর সুবিধার অপব্যবহার করে না।
 
গুগল অফিস এর ভিতরের ছবি:

 
গুগল ডুডল:
প্রতি দিন বিশ্বের যত শ্রেষ্ট সন্তানদের জন্মদিন বা মৃত্যু দিবস, ঘটে যাওয়া কোন বিশেষ ঘটনা, কোন আবিস্কারের এমন ঘটনা যেটি কোন মানুষ বা সম্প্রদায়কে স্মরনীয়-বরনীয় করে রেখেছে, কোন দেশের স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস সহ এমন সব ঘটনা বা মুহুর্ত গুলোকে নির্দিষ্ঠ দিনে গুগল তাদের হোম পেজের লগো এবং টাইটেল লেভেল দিয়ে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। এটাকেই আমার ডুডল বলি।
 
গুগলের লোগো পরিবর্তনের এটি ১৯৯৮ সাল থেকে করে আসছে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে বার্নিংম্যান ফেস্টিভ্যাল (জ্বলন্ত মানুষের উৎসব) উপলক্ষে গুগল প্রথমবারের মতো তার লোগোতে একদিনের জন্য পরিবর্তন আনে। নাম দেয় ডুডল যদিও গুগলকর্মীরা (গুগলার) ডুডলকে ‘য়ুডল’ নামে ডাকে। বছরে দুটো দিন আছে যে দিন দুটোয় অবশ্যই গুগল হবে ডুডল। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (১৪ ফেব্রুয়ারি) ও গুগলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (২৭ সেপ্টেম্বর)।
 
ডুডলের জন্য রীতিমতো আলাদা বিভাগ খুলেছে গুগল। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সাররা ডুডলগুলো আঁকত। সারাবিশ্ব থেকে ১ লাখ ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ডুডল তৈরি করে পাঠাত। গুগল কর্তৃপক্ষসেগুলোর মধ্য থেকে বেছে নির্বাচিত ডুডলগুলো প্রকাশ করত। ১২ বছর পরে চলতি বছরে গুগল ‘গ্রুপ অব ইলাস্ট্রেটর অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স’ নামের বিভাগ খুলে তৈরি করছে ডুডল।
 
গুগল অফিস এর ভিতরের আরও কিছু ছবি:

 
গুগলের আরেক নাম বিতর্ক:
বর্তমানে গুগল আমাদের এমন অনেক জিনিস উপহার দিয়েছে যার মূলে রয়েছে অনেক বিতর্ক। কেননা গুগলের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তা চরম বিতর্কের জন্ম দেয় এবং তারপর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এমনকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন একে অপরকে গালিগালাজ পর্যন্ত করে থাকে। এই তর্ক বিতর্ক কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। শেষে তর্ক বিতর্কে যে জয়ী হয় তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গুগলে তর্কবিতর্ক করে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং হেরে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সব সময় ছিল। তর্কবাগীশরা সব সময় গুগলের প্রধানের কাছ থেকে ভালো পদ পেয়েছেন। এখনো গুগলে এ ধারা রয়েছে। এ ধরনের বিতর্কে গুগলের অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বেরিয়ে এসেছে বলে মনে করা হয়। যে কারও জায়গা স্থায়ী নয়, ল্যারি পেজকে তুষ্ট করে টিকে থাকতে হয়।
 
গুগলের সমালোচিত কিছু দিক:
গুগলের সমালোচিত দিকগুলোর মধ্যে রাজনীতি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাড়িয়েছে। কর্মীদের একে অপরের সাথে মনোমালিন্য অনেকটা অপ্রকাশিতই থেকে যায়।
 
ধারণা করা হয়, গুগলে শেষ দিকে পণ্য ব্যবস্থাপক মারিসা মেয়ার ও ইউটিউবের সিইও সালার কামাঙ্গারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। বর্তমানে গুগলের চাকরি ছেড়ে ইয়াহুর প্রধান নির্বাহীর পদে যোগ দিয়েছেন মারিসা মেয়ার।
 
গুগলের শীর্ষস্থানীয় কর্মীদের এক বৈঠকে ল্যারি পেজ স্বয়ং নিজে বলেছেন – ‘এখন থেকে গুগল কোনো মারামারি বা পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত সহ্য করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গুগলের লক্ষ্য অনেক দূর, কিন্তু গুগল কখনো এর নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবে না, যদি এই বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া-লড়াই বন্ধ না হয়।’
 
এছাড়া গুগল প্লেক্সের ভিতরে পরকীয় সংক্রান্ত কিছু বিষয় রয়েছে। গুগলের কর্মকর্তাদের মধ্যে পরকীয়ার ঘটনা অনেক রয়েছে। সহকর্মী ও অধস্তনদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি নতুন ঘটনা নয়। গুগলের এক যুগলের কথা শোনা যায় যাঁরা স্বামী-স্ত্রী হলেও গোপনে দুজনই আরও দুজনকে বিয়ে করেছেন এবং তাঁদের সন্তানও রয়েছে। গুগল এমন একটি জায়গা যেখানে সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রচ্ছন্ন অনুমতি পান এখানকার কর্মকর্তারা। এমনও শোনা যায় গুগলের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় সের্গেই ব্রিনের সংসার ভেঙে যায়। সের্গেই ব্রিন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেছেন, ওই কর্মী কিছুদিন আগে হুগো বাররা নামের গুগলের আরেক কর্মীর সঙ্গে প্রেম করছিলেন।

বাম পাশের ছবিতে সস্ত্রীক সের্গেই বিন এবং ডান পাশের ছবিতে হুগো বারবার সেই গার্লফ্রেন্ড।
 
শেয়ার মূল্যে মাইক্রোসফটকে ছাড়িয়েছে গুগল:
শেয়ারমূল্যের দিক থেকে মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলেছে গুগল। বর্তমানে গুগলের মোট শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৪৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর অন্যদিকে মাইক্রোসফটের শেয়ারমূল্য ২৪৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অবশ্য দুটি প্রতিষ্ঠানই অ্যাপলের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমানে অ্যাপলের মোট শেয়ারের মূল্য ৬১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। সার্চ ইঞ্জিন, অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং ইউটিউবের মাধ্যমে বাজারে নিজেদের শেয়ারমূল্য অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে গুগল।

  • গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ১৬ শতাংশের মালিক।

 
ইউটিউব কেনার পর গুগলের আর্ন বেড়েছে:
২০০৬ সালে গুগল ইনকর্পোরেট ১শ’ ৬৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে ইউটিউবের মালিকানা কিনে নেয়। এখন সনাতন ইন্টারনেট সার্চ বিজ্ঞাপন ব্যবসার বাইরে গুগলের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে ইউটিউব।
বর্তমানে ইউটিউবের পৃষ্ঠায় ভিডিওর পাশে থাকা বিজ্ঞাপন বাবদ তাদের বার্ষিক আর্ন ৫শ’ কোটি ডলার।
 
ল্যারি পেজ এর বেতন কত?
গুগল এর নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ বার্ষিক ১.২৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পান।
 
গুগল অফিস এর আরও কিছু ছবি:

 
২০১২ সালে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল:
২০১২ সালে গুগল এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। এন্টিট্রাস্ট মামলায় গুগল তখন তদন্তের সম্মুখীন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সব লেখকের বই নিয়ে তারা করতে চেয়েছিলেন একটি অনলাইন লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হলে তা প্রকাশনার জগতে গুগলকে একচ্ছত্র আধিপত্য এনে দেবে, যেটি আমেরিকার প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। পাশাপাশি রয়েছে কপিরাইট বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু, বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা এবং প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার চুক্তিভিক্তিক কর্মচারীকে ছাটাই করার সম্ভাব্য বাস্তবতা।
 
গুগলের অজানা ১১টি সেবাপণ্য:
গুগল মার্স গুগল আর্থের মতোই একটি প্রোগ্রাম, যেটি লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। গুগল স্কলার জ্ঞানমূলক তথ্য সংগ্রহের একটি সার্চ ইঞ্জিন। বিশ্ববিদ্যালয়, বই, আদালত এবং এ রকম অন্য সাইটগুলোর কাজে ব্যবহারের জন্য গুগল স্কলার তুলনামূলক দামী সার্চ ইঞ্জিন। ৩. গুগল স্ট্রিটভিওয়ের মতো গ্রাহকদের ভার্চুয়ালভাবে জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের একটি সাইট হচ্ছে গুগল আর্ট প্রজেক্ট। বিভিন্ন ভাষায় টাইপ করার জন্য গুগলের সেবাদানকারী প্রোগ্রামটি হচ্ছে গুগল ট্রান্সলিটারেশন। গুগল অস্ট্রেলিয়া ওলেগোর মধ্যকার একটি প্রকল্প হচ্ছে বিল্ড উইথ ক্রোম। এটি গুগল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের একটি  প্রকল্প। বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বাজার-সম্পর্কিত ধারণাদানের সাইট হচ্ছে গুগল থিংক। গ্রাহকদের অনুসন্ধান দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় টিপস দানকারী সাইট হচ্ছে পাওয়ার সার্চিং উইথ গুগল। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে পরিকল্পনা করার জন্য গুগলের নেটওয়ার্কের নাম হচ্ছে স্কিমার। চলমান গানের শিরোনাম ও গানটি সম্পর্কে যে কোন ধরনের তথ্য নিতে গুগল সাউন্ড সার্চ ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন বিষয়বস্তু, প্রশ্ন বা ধারণা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য রয়েছে গুগল মডারেটর। নিরাপদ অনুসন্ধানের জন্য রয়েছে এনক্রিপটেড ডট গুগল ডটকম। এতে অনলাইন ব্যাংকের মতো সিকিউর সকেট লেয়ার এসএসএল নামক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
 
সার্চ জায়ান্ট থেকে টেক জায়ান্ট
সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে যাত্রা শুরুর পরে গুগলকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরুতে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবেই বিশ্ববাসীর কাছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় গুগল। ১৯৯৮ সালে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের জুলাই মাসেই ১০০ কোটি ওয়েবপেজের ইনডেক্স তৈরিতে সমর্থ হয়। ২০১১ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে ১০০ কোটি অনন্য ব্যবহারকারী গুগল ব্যবহার করেন। ২০১২ সালে গুগল’র রাজস্ব আর্ন ছাড়িয়ে যায় ৫ হাজার কোটি ডলার।
 
গুগল অফিস এর আরও কিছু ছবি:

 
গুগলের কিছু খুঁটিনাটি বিষয়:

  • শুরুতে গুগলকে বলা হতো ব্যাকরাব। হোমপেজে লেখা ছিল ব্যাকরাব একটি ওয়েব আরোহী, ওয়েবে বিপদসংকুল আরোহনের জন্যই এর জন্ম। শুরুতে এর ঠিকানা ছিল google.stanford.edu
  • ১৯৯৮ সালে দিনে ১০ হাজার সার্চ কোয়ারির জবাব দিতে পারতো গুগল। এখন প্রতি মাসে ১০০ বিলিয়নের বেশি সার্চ কোয়ারির জবাব দেয় গুগল।
  • ২০০৩ সালে গুগল blogger.com কিনে নেয়। একই বছর গুগল অ্যাডসেন্স ও গুগল প্রিন্ট চালু করা হয়। গুগল প্রিন্ট বর্তমানে গুগল বুক সার্চ নামে পরিচিত। এ বছরই প্রথম গুগল কোড জ্যাম নামের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
   
   
January 24, 2016 | 9 years আগে

1 responses on "গুগল: সামান্য গ্যারেজ থেকে শুরু করে যেভাবে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved