গুগল এডসেন্স নিয়ে সেই রকম মাতামাতি কখনো আমার করা হয়নি! কিন্তু আগ্রহ ছিল সবসময়। সেই ব্লগ পড়তে পড়তে চোখে পড়ে গেল তাফসার আহমেদ এর একটি লেখা গুগল এডসেন্স একাউন্ট নিয়ে। বিশেষভাবে কিভাবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট সুরুক্ষিত রাখা যায় সেটা নিয়ে লিখক খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পড়ে বেশ ভাল লাগলো আর ঠিক করে ফেললাম, আজ আমিও গুগল এডসেন্স একাউন্ট নিয়েই লিখব।
যদি আপনার একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই ব্লগ পড়ে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
গুগল এডসেন্স একাউন্ট সাসপেন্ড খুব সাধারন একটি ঘটনা… হরহামেশাই ঘটে! কিন্তু দোষ টা কার? আপনার নাকি গুগল এডসেন্স এর? দোষ যার ই হোক, আমাদের কিছু সচেতনাই পারে গুগল এডসেন্স এর একাউন্ট সব সময় নিরাপদ রাখতে। আর আপনার গুগল একাউন্টে কিভাবে ভালো করে তালা দিয়ে আটকে রাখবেন সেটা নিয়েই ওয়েবকোড ইনস্টিটিউটের সজীব রহমান লেখাটি লিখেছেন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে “দুষ্টু” লোকজনের হাত থেকে রক্ষা করবেন এই অনেক সাধের গুগল এডসেন্স একাউন্টকে।
শেয়ার করবেন না এডসেন্স পাবলিশার আইডি
যদিও এই ভুলটা আমরা খুব বেশি একটা করি না তাও অনেকে মনের অজান্তেই করে ফেলতে পারি। ভুলেও কখন কারো সাথে আপনার পাবলিশার আইডি শেয়ার করবেন না বা অনলাইনে সরাসরি দেখাবেন না। কারণ এখন এমন অনেক ক্লিক বোম্বিং সফটওয়্যার আছে যেখেন শুধু মাত্র পাবলিশার আইডি দিয়ে দিলে তা অটোম্যাটিক ভাবে এড কোড তৈরি করে এবং ক্লিক শুরু করে। এতে করে আপনার এডসেন্স একাউন্টে শতভাগ ব্যান খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওয়েব সাইটের লিংক শেয়ার থেকে বিরত থাকুন
আপনার ওয়েবসাইটের লিংক তো অবশ্যই শেয়ার করতে হবে। সেটা ভিজিটরের জন্য, ব্যাকলিংক এর জন্য আরো অনেক বিষয়ে। কিন্তু তাই বলে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। কারণ সেখানে আপনি সবার পরিচিত। এবং আপনার সেই ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে কিছু চরম দুষ্টু পাবলিকের আনাগোনাও থাকতে পারে। তাদের মনে যদি দুষ্টামি উদয় হয় তাহলে দেখা যেতে পারে ক্লিকের উপর ক্লিক শুরু হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া আমাদের অনেকেরই সমস্যা আছে আমারা নিজেরাতো ভালো করতে পারিই না বরং অন্যের ভালোও দেখতে পারি না। সেই কারণে কেউ যদি দেখে স্বদেশী ওয়েবসাইট এ এডসেন্স বসানো, সেই শুরু করে দেয় ক্লিকিং। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন নিজের কারো সাথে আপনার মানি সাইটের লিংক শেয়ার না করা। এমনকি যদি আপনি কোন ফ্রিল্যান্সার দিয়ে আর্টিকেল লিখিয়ে নেন তাহলেও তাকে না বলা যে এই আর্টিকেল কোন ওয়েবসাইট এ পাবলিশ হচ্ছে। তাহলে দেখবেন এই বিষয়ে আপনার দুশ্চিন্তা অনেক কমে যাবে
ডোমেইন এর Whois ইনফো গোপন রাখুন
ডোমেইন এর Whois থেকেও আপনার অনেক তথ্যও যেকেউ নিয়ে নিতে পারে। এমনকি আপনার একটি ডোমেইন এর তথ্য থেকে আপনার সার্ভার এ থাকা সবগুলো ডোমেইন এর তথ্যও বের করে ফেলা সম্ভব! তাই যদি আপনারা গুগল এডসেন্স এর ওয়েবসাইট করেন তাহলে অবশ্যই ডোমেইন এর Whois গোপন রাখবেন। আপনি যেখান থেকে ডোমেইন কেনেন সেখান একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন কিভাবে Whois grude সার্ভিস নিবেন। কিছু কিছু ডোমেইন প্রোভাইডার ১ বছরের জন্য ফ্রি দেয় Whois গার্ড।
প্রতিদিন আপনার ইমেইল চেক কর
এই অভ্যাস যেসকল এডসেন্স পাবলিশারদের মধ্যে নেই তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন একাউন্ট নিয়ে। কারণ যদি আপনার একাউন্টে কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে গুগলে প্রথমবার আপনাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে ইমেইল করবে এবং সেখানে একটি সময় নির্ধারণ করে আপনাকে সেই এটি সমাধানের জন্য বলবে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে যদি আপনি তা ঠিক বা বাদ দিতে না পারেন তাহলে আপনার একাউন্ট ব্যান খাবে ১০০%। তাই প্রতিদিন অন্তত ১ বার আপনার গুগল এডসেন্স একাউন্টে লগইন কর দেখুন কোন ধরনের ফ্রড ক্লিক পড়ছে কি না। কোন দেশ থেকে বেশি ভিজিটর আসছে, সিপিসি কেমন পাচ্ছন, কোন অসংগতি আছে কিনা। আর ইমেইল চেক করে যদি কোন ধরনের ওয়ার্নিং পান তাহলে সাথে সাথে সেই এটি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা কর
ভুয়া ক্লিক শনাক্ত কর
যদি আপনি দেখেন যে আপনার ওয়েবসাইট এ ভুয়া ক্লিক এর সংখ্যা বেশি পড়ে চলছে তাহলে আপনি গুগলের ইনভ্যালিড ক্লিক ফর্মে রিপোর্ট করতে পারেন। কিন্তু তার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে বেশি কিছু বিস্তারিত তথ্য। যেমন যে ব্যাক্তি ক্লিক করছে তার আইপি, কখন ক্লিক পড়েছে ইত্যাদি। কিন্তু এসকল তথ্য আপনি গুগল এডসেন্স এর ড্যাশবোর্ড থেকে পাবেন না। এমন কি গুগল এনালাইটিক্স থেকেও না! কিন্তু এরও একটা উপায় আছে !
আপনার ওয়েবসাইট এ ব্যবহার কর http://statcounter.com/ । এই স্টাট সাইট থেকে আপনি খুব সহজেই দেখে নিতে পারবেন কোন আইপি কোন এড ফরম্যাট এ ক্লিক করেছিলো, কত বার ক্লিক করে ছিল এবং কখন ক্লিক করেছিলো। সব কিছুই আপনি এখান থেকে ট্র্যাক করতে পারবেন। তাই ভুয়া ক্লিক শনাক্ত করার জন্য এইটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। যখন আপনি দেখতে পাবেন একটি আইপি থেকে বার বার ক্লিক পড়ছে আপনার এড এ, তখন আপনি এই ফর্মটি পূরণ করে গুগলের কাছে আপনার রিপোর্ট পাঠিয়ে দিন। গুগল তখন সব যাচাই বাছাই করে দেখবে এবং যখন দেখবে আপনি নিজে এই কাজ করেননি তখন আপনার একাউন্টকে গুগল সেফ জোন এ রেখে দেবে।
পেইড ট্র্যাফিক ও ক্লিক এক্সচেংজ থেকে বিরত থাকুন
ভাবছেন পেইড ট্র্যাফিক নিয়ে এসে গুগল এডসেন্স চালাবেন? অথবা অন্যের সাথে নিজের এডসেন্স ক্লিক এক্সচেঞ্জ করবেন, তাহলে ধরে নিন আপনার একাউন্ট বেশিদিন জীবিত থাকবে না। এই ২টি জিনিস তাদের পলিসিতে খুব জোর দিয়ে বলা আছে। গুগল সবসময় চায় তার ক্লাইটের যে লস না হয়, তারা যেন খুশি থাকতে পারে। সেই কারনে এই দিক থেকে গুগল খুবই কঠোর।
প্লাগিন ব্যবহার কর
যারা ওয়ার্ডপ্রেস এ ওয়েবসাইটে তৈরি করেছেন তাদের জন্য একটি ভালো প্লাগিন আছে অবৈধ ক্লিক ঠেকানোর। AdSense Click-Fraud Monitoring Plugin নামের এই প্লাগিন দিয়ে আপনি সহজেই এই ফ্রড ক্লিক বন্ধ করতে পারবেন। এই প্লাগিন ব্যবহার করলে কেউ ২-৩ বার এর বেশি যদি এড এ ক্লিক করে তাহলে সে আর আপনার সাইট এ এড দেখতে পারবে না। অর্থাৎ সে চাইলেও আপনার এডে আর ক্লিক করতে পারবে না। এতে করে ইনভ্যালিড ক্লিক অনেক কমে যাবে আপনার একাউন্টে।
উপরের এসকল বিষয় গুলো যদি নিয়মিত মিনে চলতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার একাউন্ট সব সময় সেফ জোন এ থাকবে। তবে এসবের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই এসকল সমস্যা গুলো আপনি দ্রুত শনাক্ত করতে পারবেন এবং তা সমাধানও করতে পারবেন।