লিখিত প্রস্তুতি :: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান (পর্ব: ১)
লিখিতর সিলেবাসের ভিত্তিতে সংবিধানের উপর ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুতি’
:: সম্ভাব্য প্রশ্ন (সিলেবাসের আলোকে ) :
১। সংবিধান প্রণয়ন ও মুদ্রণের ইতিহাস (৩৪ তম বিসিএস, একটু ঘুরিয়ে)
২। বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য / শ্রেষ্ঠ সংবিধান (২৩ তম বিসিএস)
৩। ১৯৭২ সালের সংবিধান বৈশিষ্ট্য/ কেন শ্রেষ্ঠ সংবিধান/ ১৯৭২ এর সংবিধানের মূলনীতি (৩০ তম বিসিএস)
৪। প্রস্তাবনা (মুখস্ত) + প্রস্তাবনার গুরুত্ব ও তাত্পর্য
৬। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি / বিভিন্ন শাসনামলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে আনীত পরিবর্তন (৩২ তম বিসিএস)
৭। মৌলিক অধিকার (সিলেবাসে উল্লেখ না থাকলেও জানা দরকার) (২৯ তম বিসিএস, একাধিকবার)
৮। সংবিধানের সংশোধনীসমূহ ও সংবিধান সংশোধন পদ্বতি (১৩, ১৮, ৩২ তম বিসিএস)
৯। অর্থবিলে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে? কোন মন্ত্রী, কোন মন্ত্রণালয়, এর অনুমোদন প্রক্রিয়া (২৯ তম বিসিএস)
১০। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বুঝেন? বিভিন্ন শাসনামলে এক্ষেত্রে আনীত পরিবর্তন (২২ তম বিসিএস)
১১। সংবিধানভিত্তিক কিছু ছোট প্রশ্ন
১২। গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ সমূহ **
(NB: কোন অনুচ্ছেদসমূহ আমরা জোর দিয়ে পড়তে পারি ‘পরবর্তী পর্বে’ তা উল্লেখ করবো)
.
:: লিখিত এর সিলেবাসে উল্লেখকৃত বিষয় :
১.প্রস্তাবনা (Preamble)
২.বৈশিষ্ট্য (Features)
৩. রাষ্ট পরিচালনার মূলনীতি (Directive Principles of State Policy)
৪. সংশোধনী (Constitutional Amendments)
=
.
—-
:: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
—-
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তারিখ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহিত হয় এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। মূল সংবিধান ইংরেজী ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজী ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রুপ অনুসরণীয় হবে।
.
বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখা বিধৃত আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালের ষোড়শ সংশোধনী সহ এ সংবিধান মোট ১৬ বার সংশোধীত হয়েছে।
.
—-
:: সংবিধান প্রণয়ন ও মুদ্রণের ইতিহাস
—-
সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত এই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে।১২ই অক্টোবর, ১৯৭২ তারিখে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সংবিধান বিল গণপরিষদে উত্থাপন করেন। এরপর ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭২ সালে বিলটি পাস হয় এবং আইনে পরিণত হয়।
.
সংবিধান লেখার পর এর বাংলা ভাষারূপ পর্যালোচনার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক, সৈয়দ আলী আহসান এবং মাযহারুল ইসলামকে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার ভার দেয়া হয়। গণপরিষদ ভবন, যেটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, সেখানে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে সহযোগিতা করেন ব্রিটিশ আইনসভার খসড়া আইন-প্রণেতা আই গাথরি। সংবিধান ছাপাতে ১৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিলো। শিল্পী হাশেম খান অলংকরণের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তৈরী ক্র্যাবটি ব্রান্ডের দুটি অফসেট মেশিনে সংবিধানটি ছাপা হয়। মূল সংবিধানের কপিটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
.
সংবিধান গৃহীত হয়: ৪ নভেম্বর, ১৯৭২
সংবিধান কার্যকর হয়: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২
.
—-
:: বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য / কেন শ্রেষ্ঠ সংবিধান?
—-
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। আর এই আইনের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের।
.
বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তারিখ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহিত হয় এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। মূল সংবিধান ইংরেজী ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজী ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রুপ অনুসরণীয় হবে।
.
সংবিধানের তৃতীয়ভাগে অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে অনুচ্ছেদ ৪৩ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদগুলোতে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, চলাফেরার অধিকার, সমাবেশের অধিকার, সংগঠনের অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার, গ্রেফতার বা আটক সর্ম্পকে রক্ষাকবচ ইত্যাদি অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।একজন নাগরিক তার মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য রীট আবেদন করতে পারে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। আমি মনে করি অনুচ্ছেদ ১০২ বাংলাদেশের সংবিধানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
.
বৈশিষ্ট্য :
১.লিখিত দলিল, ২.দুষ্পরিবর্তনীয়, ৩.রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ৪.মৌলিক অধিকার, ৫.সর্বজনীন ভোটাধিকার, ৬.প্রজাতান্তিক, ৭.সংসদীয় সরকার, ৮.এককেন্দিক রাষ্ট্র, ৯.আইনসভা, ১০.সবোর্চ্চ আইন, ১১.বিচার বিভাগ
.
—-
:: সংবিধানের মূলনীতি:
—-
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার ২য় প্যারায় বিধৃত আছে,
“”……আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে…….””।
.
অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি ৪ টি:
১. জাতীয়তাবাদ
২. সমাজতন্ত্র
৩. গণতন্ত্র
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা
.
—-
:: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি (২য় ভাগ)
—-
৮৷ মূলনীতিসমূহ
(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।
(২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ-পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন-প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না৷
.
৯। জাতীয়তাবাদ
ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।
.
১০। সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি
মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।]
.
১১৷ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে]৷
.
১২। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন,
বিলোপ করা হইবে।]
.
১৩৷ মালিকানার নীতি
উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বন্টনপ্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা-ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে:
(ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা, অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা; (খ) সমবায়ী মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে সমবায়সমূহের সদস্যদের পক্ষে সমবায়সমূহের মালিকানা; এবং (গ) ব্যক্তিগত মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা৷
.
১৪৷ কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি
রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিককে-এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা৷
.
১৫৷ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা
রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়:
(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;
(খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;
(গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; এবং
(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার৷
.
১৬৷ গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব
নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
.
১৭৷ অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা
রাষ্ট্র-
(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য;
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য;
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
.
১৮৷ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা
(১) জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷ (২) গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
.
১৮ক। পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন
রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।
.
১৯৷ সুযোগের সমতা
(১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন৷
(২) মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
(৩) জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।]
.
২০৷ অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম
(১) কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয়, এবং “প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী”-এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন৷
(২) রাষ্ট্র এমন অবস্থাসৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আর্ন ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক-সকল প্রকার শ্র্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে৷
.
২১৷ নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য
(১) সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য৷
(২) সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য৷
.
২২৷ নির্বাহী বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ
রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন৷
.
২৩৷ জাতীয় সংস্কৃতি
রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন৷
.
২৩ক। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি
রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।]
.
২৪৷ জাতীয় স্মৃতিনিদর্শন, প্রভৃতি
বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
.
২৫৷ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন
জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা-এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সকল নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র
(ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করিবেন;
(খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবেন; এবং
(গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন৷
.
—-
:: মৌলিক অধিকার (৩য় ভাগ)
—-
মৌলিক অধিকারের সজ্ঞা ও সম্পর্কৃত তথ্য:
কতিপয় মানবাধিকার সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষিত বা স্বীকৃত হলে তখন সেগুলো মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত হয়। মৌলিক অধিকারের সাথে মানবধিকারের সম্পর্ক হলো – “”সকল মৌলিক অধিকারই মানবধিকার কিন্তু সকল মানবধিকার মৌলিক অধিকার নয়।
.
সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারসমূহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য যেকোন আইন এর পরিপন্থী হলে বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা বাতিল হয়। মৌলিক অধিকার সমূহের উপস্থিতির কারনেই অসাংবিধানিক কোনো আইন প্রনণয়ন করা সম্ভব হয় না।
.
মৌলিক অধিকার হল রাষ্ট্র প্রদত্ত এমন এক অধিকার যেটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার এক অপরিহার্য বিষয়। এই অধিকারগুলো থেকে দেশের কোন নাগরিককে আইন বহির্ভূতভাবে বঞ্চিত করলে সে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ দ্বারা দেশের জনগনকে তার মৌলিক অধিকার বলবৎ করনের জন্য আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হল। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক মৌলিক অধিকার বলবৎ করার এখতিয়ার সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ১০২ অনুচ্ছেদে বিবৃত রয়েছে।আদালত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী পূর্বের সকল আইন সাংবিধানিকভাবে অবৈধ এবং তা একই সঙ্গে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন না করার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেয়।
.
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩য় ভাগে ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত ১৮টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬ টি (৩২,৩৩,৩৪,৩৫,৪১ ও ৪৪) মৌলিক অধিকার বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিক ও বিদেশীরা ভোগ করতে পারে এবং বাঁকী ১২ টি (২৭,২৮,২৯,৩০,৩১,৩৬,৩৭,৩৮,৩৯,৪০,৪২, এবং ৪৩) শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকগণ ভোগ করতে পারবে।
.
মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল:
অনুচ্ছেদ ২৬: (১) এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
অনুচ্ছেদ ২৬: (২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের
কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
অনুচ্ছেদ ২৬: (৩) সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত সংশোধনের ক্ষেত্রে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।
.
—-
:: সংবিধানে বিধৃত মৌলিক অধিকার অধিকার সমূহ হলো:
—-
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭-৪৪ অনুচ্ছেদে মোট ১৮টি মৌলিক অধিকারের উল্যেখ রয়েছে। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে আদালত কর্তৃক বলবদ করা যায়।
.
২৭। আইনের দৃষ্টিতে সমতা
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।
.
২৮। ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য নয় (selected part)
(১) কেবল, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
.
২৯। সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা
(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই
(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপর্যুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকুলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্র-দায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মীবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
.
৩০। বিদেশী, খেতাব, প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ
রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন নাগরিক কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোন খেতাব, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করিবেন না।
.
৩১। আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার
আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
.
৩২। জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকাররক্ষণ
আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।
.
৩৩। গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ (selected part)
(১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শেরও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ-সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। (২) গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে (গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্ত-কাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
.
৩৪। জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরণ (selected part)
(১) সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হইলে তাহা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।
.
৩৫। বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ (selected part)
(১) অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটন-কালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দন্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না। (২) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাইবে না। (৩) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন। (৪) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না। (৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।
.
৩৬। চলাফেরার স্বাধীনতা
জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধÑসাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
.
৩৭। সমাবেশের স্বাধীনতা
জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধ্য-নিষেধÑসাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
.
৩৮। সংগঠনের স্বাধীনতা
জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধ্য-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি
(ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়;
(খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিথ হয়;
(গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা
(ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।
.
৩৯। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা
(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
.
৪০। পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা
আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধÑসাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে।
.
৪১। ধর্মীয় স্বাধীনতা
(১) : আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা- সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেখ নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;
(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।
(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।
.
৪২। সম্পত্তির অধিকার
(১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।
(২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় ও প্রদানের নীতি ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরূপ কোন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
.
৪৩। গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের (ক) প্রবেশ, তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তা-লাভের অধিকার থাকিবে; এবং (খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা-রক্ষার অধিকার থাকিবে।
.
৪৪। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ
(১) : এই ভাগে প্রদত্ত অধিকার সমূহ বলবৎ করিবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।
.
মৌলিক অধিকার স্থগিত:
সংবিধানের ১৪১(ক), ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদের আওতায় দেশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবনে হুমকির কারণে জরুরি অবস্থায় ঘোষিত হতে পারে। ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা (সর্বাধিক ১২০ দিনের জন্য) ঘোষিত হলে কতিপয় (৬ টি) মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়। এগুলো হলো:
অনুচ্ছেদ ৩৬: চলাফেরার স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৭: সমাবেশের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৮: সংগঠনের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪০: পেশা বা বৃত্তির-স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪২: সম্পত্তির অধিকার
.
===
উত্স ও তথ্যসূত্র :
১.আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট
২.আমেরিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এর ওয়েবসাইট
৩. পত্রিকা, আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।
.
শুধু BCS: Our Goal [Largest …] গ্রুপ
BCS Written Campaigner গ্রুপ
এবং Zakir’s BCS specials পেজটির মেম্বারদের জন্য
কার্টেসি ছাড়া অন্য কোন গ্রুপ বা পেজে পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
অন্যের বা বান্দার হক নষ্ট করলে আল্লাহ কখনও ক্ষমা করেনা !
===
.
প্রচেষ্টার চেয়ে বড় কোনো যুক্তি নাই। [ ইবনে হিব্বান ]
যে জ্ঞানের সন্ধানে বের হয়, সে আল্লাহর পথে বের হয়। [ তিরমিযী ]
যার মনে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [ সহীহ মুসলিম ]
আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাহর সাহায্য করেন, যতোক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে। [ সহীহ মুসলিম ]