খতিয়ান পরিচিতিঃ
”খতিয়ান” নামটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত কিন্তু অনেকেই জানি না এবং বুঝি না বা কখনো বোঝারও চেষ্টা করিনি খতিয়ান টা আসলে কি জিনিস? এজন্যই আজ খতিয়ান সম্পর্কে ধারণা দেবার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। জমির মালিকানা স্বত্ব সংরক্ষণ করন আদায়ের উদ্দেশ্যে দেশের জরীপ বিভাগ কতৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণি, এর জন্য প্রদেয় খাজনা ইত্যাদির বিবরণসহ ক্রমিক নাম্বার অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাকেই খতিয়ান বলা হয়। খতিয়ানকে অনেকক্ষেত্রে পর্চা বলা হয়ে থাকে। মূলত খতিয়ান হল ভূমি মালিকানার বিবরণ। তাই সাবেক খতিয়ান এবং বর্তমান খতিয়ান পর্যালোচনা করলে ভূমির মালিকানার ধারাবাহিকতা দেখতে পাওয়া যায়। ফলে কোন জমির বর্তমান ও অতীত মালিকদের নামের তালিকা আমরা সহজেই খতিয়ান দেখে বের করতে পারি।
প্রত্যেক এলাকায় বা প্রত্যেক মৌজায় জমির মানচিত্র আছে এবং প্রতিটি জমির জন্য একটি আলাদা দাগ নম্বর আছে। এই মানচিত্র দেখেই জমি পরিমাপ করা হয় এবং দাগ নম্বর দেখে জমিটি চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
খতিয়ানে কি উল্লেখ করা থাকে?
খতিয়ানে কিছু কিছু বিষয়বস্তু সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। খতিয়ানে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালার ১৮ নম্বর ধারায় বিবৃত হয়েছে। সেগুলো হল—
- প্রজা বা দখলদারের নাম, ঠিকানা ও পিতার নাম এবং প্রজা বা দখলদার ব্যক্তি কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
- প্রজা বা দখলদার কতৃক জমির অবস্থান, শ্রেণী, পরিমাণ ও সীমানা।
- ঐ প্রজার জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
- এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
- খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনার পরিমাণ এবং ২৮,২৯,৩০ বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা। গোচারণ ভূমি, বনভূমি ও মৎস্য খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
- খাজনা যে পদ্ধতিতে ধার্য করা হয়েছে তার বিবরণ।
- ২৬নং ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
- যদি খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে যে যে সময়ে ও যে যে পদক্ষেপে বৃদ্ধি পেয়েছে তার বিবরণ।
- কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কতৃক পানির ব্যবহার এবং পানি সরবরাহের জন্য যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রজা ও জমির মালিকের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের বিবরণ।
- প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিণতি।
- পথ চলার অধিকার ও জমির সংলগ্ন অন্যান্য অধিকার। নিজস্ব জিম হলে তার বিবরণ।
এছাড়াও খতিয়ানে নিজস্ব খতিয়ান নম্বর, জমির দাগ নম্বর, বাট্টা নম্বর, এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর এবং জে, এল, নম্বর উল্লেখিত থাকে।
খতিয়ানের প্রকারভেদঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খতিয়ান সাধারণত ৪ প্রকার। সেগুলো হল—
১) সি.এস. খতিয়ান,
২) এস. এ. খতিয়ান,
৩) আর. এস. খতিয়ান এবং
৪) বি. এস. খতিয়ান/সিটি জরিপ।
1 responses on "খতিয়ান সম্পর্কে জানুন"