৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
,
“”কাল্পনিক সংলাপ”” লেখার বাস্তব কৌশল!
সংলাপ বিষয়টা কী? সহজ বাংলায় বলতে গেলে কিছু মানুষের কথাবার্তা। কথা তো আমরা সারাদিনই বলি। বন্ধুদের সাথে, টিচারের সাথে, মুঠোফোনে তার সাথে, আবার টিভিতেও দেখি নান রকম টক শো। হ্যা, এগুলোই সংলাপ। বিসিএস এ ৩৫ তম থেকে এই অংশটি নতুন সংযোজন। কিছু প্রকাশনীর বই (সব প্রকাশনী নয় কিন্তু) পড়ে দেখলাম তারা এই ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্বই দেয়নি। কোন রকমে লিখে বইটা ছাপিয়ে দিল। দেখে মনে হল, “”ছেড়ে দেয় মা কেঁদে বাঁচি “” এমন অবস্থা। একটু কৌশলী হলেই এখানে ভাল মার্কস তুলা সম্ভব। আপনারা যারা নিয়মিত টকশো দেখতে অভ্যস্ত তারা সেটাকেই ফলো কর কিভাবে অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক প্রশ্নটা করেন এবং অন্যরা কিভাবে তার উত্তর দেয়! সংলাপের শুরুতেই কিন্তু কেউ বিষয়ের গভীরে ঢুকে পড়ে না। প্রাথমিক আলোচনা করতে করতেই গভীর আলচনার সুত্রপাত ঘটে। কিছু কিছু বইতে দেখলাম কাল্পনিক সংলাপ ২ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আপনি চাইলে সে সংলাপকে ৩,৪ কিংবা ৫জনের মধ্যে ও সৃষ্টি করতে পারেন।
,
ভিন্ন কিছু করলেই তো মার্কস ভিন্ন আসবে! কাল্পনিক সংলাপ যখন ৩ বা তার বেশির মধ্যে হবে, তখন চেষ্টা করবেন, যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেখানে ২ জন বিষয়ের পক্ষে বললে একজন যেন কিঞ্চিৎ বিপক্ষে বলে। তাহলে সেটা ফলপ্রসূ ও বাস্তবিক মনে হবে। তবে সাবধান হতে হবে যেন সংলাপের সমাপ্তিটা ইতিবাচক হয়। অর্থাৎ সংলাপে অংশগ্রহনকারী সবাই যেন ঐকমত্যে পৌঁছায়।
,
উদাহরণ দিচ্ছি, ধরুন পরীক্ষায় আসল “”বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে সংলাপ তৈরি কর “”। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে কোনভাবেই যেন আপনার কাল্পনিক চরিত্রগুলোর কেউই সরকারের খুব বেশি বিপক্ষে না যায়। ২জন সরকারে পক্ষে বলবে, অপরজন বলবে আরো কী কী দরকার ছিল এই বিচারের জন্য। তবে যিনি নেতিবাচক বলবেন, তার কথাগুলো যেন এমন হয় যার পদক্ষেপ সরকার ইতমধ্যে নিয়ে নিয়েছেন বা নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন। তাহলে এক্ষেত্র সংলাপের সমাপ্তিটা সরকারের ইতিবাচক ভুমিকা দিয়ে শেষ করতে পারবেন।
,
যেমন আপনার সংলাপের একটি চরিত্র বলল, “”বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে গিয়ে নানা আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিচ্ছে। তবুও এই সরকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষনার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে সব চাপ মাথায় নিয়েও সফলভাবে আন্তর্জাতিকের মানের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার জনগণকে উপহার দিচ্ছে।””
এবার যেটা নেতিবাচক চরিত্রের কথা বলেছিলাম তার কথা কেমন হবে? এক্ষেত্রে ডিপ্লোম্যাটিক হতে হবে আপনাকে। তার কথা নেতিবাচক হবে কিন্তু জোরালো কোন পয়েন্ট আসবে না। তাহলে এক্ষেত্রে তিনি বলতে পারেন “” যুদ্ধাপরাধের জন্য যারা শাহবাগে আন্দোলন করেছিল তাদের নিরাপত্তার জন্য এই সরকারের আরো ভাল ব্যবস্থা করা দরকার ছিল। আমরা আশা করছি বিষয়টা সরকার আরো ভাববে। “” এক্ষেত্রে দেখুন তার কথায় নেতিবাচক ছোঁয়া আছে কিন্তু জোরালো অবস্থান নাই। আপনি আরেকটা চরিত্র দিয়ে চাইলেই এই যুক্তি খন্ডন করতে পারবেন।
তবে যদি কেউ এই ডিপ্লোম্যাটিক কাজটি করতে না পারেন,তবে তিনি সহজে সব চরিত্রগুলো ইতিবাচক কথা দিয়েও শেষ করতে পারেন। কিন্তু নেতিবাচক কথার অবতারনা করলে সেটার সমাপ্তি যেন অবশ্যই ইতিবাচক এবং সবার(আপনার সৃষ্টি করা চরিত্রগুলো) ঐকমত্যের মধ্যে পৌঁছায় সে দিকে নজর দিতে হবে। অর্থাৎ এক কথায় আপনার সংলাপের সারমর্ম যেন সরকারের সফলতাকেই ইঙ্গিত করে সেদিকে খুব নজর দিবেন। সরকারের অধীনে চাকরির পরীক্ষায় তো আর সরকারের বিরুদ্ধে লেখা যায় না।
,
সম্প্রতি অনেকগুলো গোলটেবিল বৈঠকের সংলাপ পত্রিকাই এসেছে। যাদের কাছে পত্রিকার ঐ সব সংলাপ আছে তারা একবার দেখে নিতে পারেন। আপনার লিখিত পরীক্ষার “”কাল্পনিক সংলাপ “”লেখার জন্য পত্রিকার ঐ সব প্রকাশিত সংলাপের চেয়ে ভাল উদাহরন আর হতে পারেনা।
,
আর কাল্পনিক সংলাপের জন্য আলাদা কোন বিশেষ প্রস্তুতির দরকার নেই। আপনি নিয়মিত পত্রিকার যেসব ইস্যুগুলো পড়েন, কিংবা বাংলাদেশ বিষয়াবলীর জন্য যেটি পড়ছেন সেসব পড়লেই হবে। সেখানের তথ্যগুলোই মুলত আপনার কাল্পনিক সংলাপ লেখার ক্ষেত্রে কাজ দিবে।