
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় পরীক্ষার্থী, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের অধ্যায়ভিত্তিক একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো তোমাদের সুবিধার্থে।
শহিদ মিনার নির্মাণ
২১ ফেব্রুয়ারি ছুটি ঘোষণা
শ্রমিকের ন্যায়সংগত অধিকার
?
ক. প্রথম শহিদ মিনার কবে নির্মাণ করা হয়?
খ. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘?’ চিহ্নিত স্থানটি কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’—উক্তিটির সঙ্গে উদ্দীপকের কোনো যোগসূত্র আছে কি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর-ক
প্রথম শহিদ মিনার ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ করা হয়।
উত্তর-খ
পৃথিবীর প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মাতৃভাষা দিবসের ভূমিকা রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করতে থাকি। দিনটিকে আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদের ঐক্যের প্রতীক মনে করি। বাঙালি জাতির এই শোকের দিবসটিকে পরে কানাডাপ্রবাসী কয়েকজন বাঙালির উদ্যোগে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তত্পরতার ফলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইউনেসকো’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসমূহের নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ভূমিকা রাখছে।
উত্তর-গ
উদ্দীপকের ‘?’ চিহ্নিত স্থানে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ২১ দফা কর্মসূচির কথা বোঝানো হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার জনগণ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য। ফলে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনের সময় মুসলিম লীগের ভূমিকাও ছিল নেতিবাচক। ফলে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল একটি নির্বাচনী জোট গঠন করে। উদ্দেশ্য মুসলিম লীগকে পরাজিত করা। দলগুলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের তথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। বাকি দলগুলো হলো কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করে; যেটি তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। ২১ দফার অন্যতম ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, সেচ ও বন্যানিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, দুর্নীতি নির্মূল করা, বিচার বিভাগকে পৃথক্করণ, ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটি ঘোষণা, শ্রমিকদের ন্যায়সংগত অধিকার রক্ষা এবং ভাষাশহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার নির্মাণ প্রভৃতি।
উদ্দীপকে উল্লিখিত তিনটি দাবি—শহিদ মিনার নির্মাণ, ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটি ঘোষণা ও শ্রমিকদের ন্যায়সংগত অধিকার প্রদানও ছিল ২১ দফার অন্তর্ভুক্ত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মনে জায়গা করে নেয় যুক্তফ্রন্ট। তারা মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে। বিজয়ী হয় যুক্তফ্রন্ট। তাই উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মসূচিগুলো যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ২১ দফাকে নির্দেশ করে।
উত্তর-ঘ
‘জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’—উক্তিটির সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চার দলের যে নির্বাচনী জোট ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তা-ই যুক্তফ্রন্ট। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য নির্বাচনী জোট গঠন করা হয় এবং জনগণকে আস্থায় রাখতে ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। এই ২১ দফা মূলত এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। যার ফলাফল আমরা নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে থাকি।
১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২২৩ আসন লাভ করে। অন্যদিকে মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও জনগণ যে আর তাদের ওপর ভরসা করতে পারছে না, এই নির্বাচনের ফলে তা স্পষ্ট হয়।
১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ জন্মলাভ করে। আর অল্প সময়ের মধ্যে, অর্থাত্ ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে। এ ক্ষমতা পেয়েছে মূলত জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের কারণে। এই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব ও প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য রায় প্রদান করে। জনগণই যে সকল ক্ষমতার উত্স, তা এই নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ২১ দফা কর্মসূচি জনগণকে যুক্তফ্রন্টের ওপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে।