
বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার যেন সোনার হরিন। অনেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেও চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছেন, অনেকে আবার চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়ে লিখিত পরীক্ষাও দেন এরপর ভাইভা বা ইন্টারভিউ দিতে যেয়ে বাদ পরে যান। সফলতার প্রথম ধাপই হলো ইন্টারভিউ। এক কথায় বলতে গেলে কর্মজীবনের প্রথম সিঁড়ি এটি। নিজের যোগ্যতা প্রমানের অন্যতম এবং প্রথম স্থান হচ্ছে ইন্টারভিউ বোর্ড। সেখান থেকেই আপনাকে নানা ভাবে পরখ করার সূত্রপাত হয়। আপনি যে পেশার জন্যই ইন্টারভিউ দিতে যান না কেন সেই পেশার জন্য আপনি কতটা উপযোগী তা যাচাই করতেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক অভিঙ্গ কর্মকর্তা ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত থাকবেন।
তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বোর্ডের সামনে চাকরিপ্রার্থীরা টেনশনে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অনেক ভালো শিক্ষার্থীও ইন্টারভিউতে শংকিত হয়ে পড়ে। এই সমস্ত স্বাভাবিক ইন্টারভিউ ভীতি দূর করা তেমন কঠিন বিষয় নয়। শুধু আপনাকে অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। সেজন্য আপনাকে ইন্টারভিউর আগে প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে এবং কিছু সহজ নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
পূর্ব প্রস্তুতি
যে কোন কাজের একটা পুর্ব প্রস্তুতি থাকে যার মাধ্যমে কাজটি সহজ ও সুন্দরভাবে সমাধা করা যায়। যে কোন চাকরির ইন্টারভিউয়ের বেলায়ও একথা প্রযোজ্য। ভালো একাডেমিক রেজাল্ট,বুদ্ধিমত্তা,জ্ঞান,মেধা ও মনন থাকা সত্ত্বেও শুধু ইন্টারভিউ প্রস্তুতি না থাকার কারণে বহু আকাঙ্ক্ষিত চাকরিটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই সে জন্য দরকার পূর্ব প্রস্তুতি।
পোশাক ও চালচলন
ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর খুব সচেতন দৃষ্টি থাকা উচিত। একজন নিয়োগকর্তা প্রথমেই নজর দেবেন সাক্ষাৎকার দাতার পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেই তিনি সাক্ষাৎদাতার স্মার্টনেস, বাহ্যিক গুণাবলি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা মেপে নেন।
অস্পষ্ট বা অশালীন ভাষা ব্যবহার করা, একগুয়েমি মনোভাব প্রদর্শন, মুদ্রাদোষের পুনরাবৃত্তি প্রভৃতি ব্যবহার সাক্ষাতদাতার জন্য অবশ্যই নেতিবাচক। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- – ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে অবশ্যই তা ফরমাল হতে হবে এবং মার্জিত এবং রুচিশীল শার্ট পড়বেন। অবশ্যই উগ্র রং এর শার্ট পরিহার করতে হবে। শার্টের সাথে প্যান্ট ম্যাচ করে পড়লে ভালো দেখাবে। অবশ্যই শার্টের সাথে ম্যাচিং টাই পরতে হবে।
- – মেয়েরা দেশীয় পোশাক পরতে পারেন। তবে হালকা রঙের সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরে যাবেন, তা যেনো আঁটসাঁট না হয়। চুল ছেড়ে না রেখে পনিটেইল করে বেঁধে গেলে মার্জিত দেখাবে।
- – জুতার ক্ষেত্রে কালো জুতাই সবার জন্য বেশি মানানসই, ভাইভার পুর্বে জুতা পালিশ করে নেবেন। মেয়েরা হিল পরলে খেয়াল রাখবেন তা যেনো অতিরিক্ত শব্দ না করে, পা ছেঁচড়ে হাঁটবেন না।
- – ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার সময় অনুমতি নিয়ে ঢুকে সালাম দিবেন। অতি চটপটে ভাব বা বিনয়ী ভাব দেখাতে যাবেন না। অনেকে খুব আপসেট থাকে এটাও বুঝতে দেয়া যাবে না।
- – যতক্ষন না আপনাকে বসতে বলা হয় ততক্ষন অপেক্ষা কর বসতে বলার পর ধন্যবাদ জানাবেন।
- – চেয়ারে বসার সময় হালকা করে চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসুন, অহেতুক নড়াচড়া করবেন না বা পা নাচাবেন না।
- – হাঁচি পেলে রুমাল বের করে হাঁচি দিবেন বা কাশি পেলে মাথা ঘুরিয়ে মুখ ঢেকে কাশি দিবেন। হাঁচি বা কাশির পর অবশ্যই এক্সকিউজ মি বা সরি বলবেন।
ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রস্তুতি - – প্রথমে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসই আপনাকে সফলতা অর্জনে অনেক এগিয়ে দেবে।
- – নির্ধারিত দিনে অফিসে ঠিক সময় মত যাবেন। রাস্তায় জ্যাম থাকবেই, তাই হাতে সময় নিয়ে একটু আগেই পৌঁছে যান।
- – সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিন। কী ধরনের কাজ হয় জানতে তাদের ওয়েবসাইট দেখুন।
- – জীবনবৃত্তান্ত, একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, আগে চাকরি করে থাকলে সেই অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট, একটি কলম ও নোটপ্যাড সঙ্গে রাখুন।
- – আপনার মুঠোফোনটি ইন্টারভিউ দিতে ঢোকার আগে সাইলেন্ট করে নিন।
- – প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব সহজ, সরল ও সংক্ষিপ্তভাবে দিন।
- – কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সরাসরি বলুন, আমতা আমতা করে সময় নষ্ট করবেন না।
- – ইন্টারভিউ এর সময় যেমন নার্ভাস হওয়া যাবেনা, তেমনি ওভার স্মার্টনেস দেখানোও ঠিক নয়।
- – আপনাকে বাংলায় প্রশ্ন করা হলে, ইংরেজীতে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একইভাবে ইংরেজীতে প্রশ্ন করলে ইংরেজীতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
- – নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন, আপনার দুর্বলতা কী, কেন আমরা আপনাকে বেছে নেব, আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর পরে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান—এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। এ ধরনের প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে পড়ার কারণ নেই। এগুলির সাহায্যে আপনার আত্মবিশ্বাস কিংবা দূরদৃষ্টি বা অধ্যাবসায় কতটা মজবুত, সেটাই পরীক্ষা করেন প্রশ্নকর্তারা। এই প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধি করে দিলে ভাল। আর যদি সেরকম কিছু মাথায় আসছে না মনে হয়, তা হলে সোজাসাপ্টা সরল উত্তর দেওয়াই নিরাপদ।
- – ইন্টারভিউ শেষে কখনোই জানতে চাবেন না চাকরীটি আপনার হবে কি হবে না,তাহলে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীরা একে আপনার দুর্বলতা হিসেবে নিবে।
যা এড়িয়ে চলবেন - – যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া ইন্টাভিউতে বসা।
- – যেটি খুশি পোশাক পরা।
- – বেশি আগে বা পরে ইন্টারভিউ হলে উপস্থিত হওয়া।
- – আগের কোম্পানির বস কিংবা ম্যানেজারের নামে বদনাম করা। অস্পষ্ট বা কোনোরকম অশালীন ভাষা ব্যবহার করা।
- – ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় রুক্ষ্ম মনোভাব দেখানো।
সব মিলিয়ে ঠিকমতো পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিলে পৃথিবীর কঠিন থেকে কঠিনতম ইন্টারভিউ টপকানো অসম্ভব নয়। ইতিবাচক মনোভাব এবং আশাবাদী থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে কয়েকটা পরীক্ষায় পর্যায়ক্রমে সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হয়েই কেবল ইন্টারভিউতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিৎ ইন্টারভিউতে সাফল্য দেখিয়ে চাকরি পাওয়ার শেষ পদক্ষেপও কৃতিত্বের সাথে উতরে যাওয়া।
আরও পড়ুনঃ
নতুন চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন
ফোরাম প্রশ্নোত্তর চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য কিছু পরামর্শ
ইন্টারভিউয়ের আগেই ৫টি করণীয় জেনে নিন