আসলেই কি আপনি অনলাইনে কাজ করার উপযুক্ত?

অনলাইনে কাজ করা আর একটি অফিসে বসে কাজ করার পার্থক্য অনেক।
অনেক তরুণ দেখা যায়, কাজ শিখেন, ভালো কাজ জানেন, প্রচুর মেধাবী, তবুও ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ব্যর্থতার পেছনে কারণগুলো খোঁজার জন্য ইশিখন.কম বিগত ৬ মাস থেকে অনলাইনে বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ায় অনলাইনে কাজ করতে আগ্রহী এই রকম ৪০০ জনের উপর জরিপ চালায়।

১। এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়, নতুন যারা প্রচন্ড ইচ্ছা নিয়ে কাজ করতে আসে
২। যারা ভালো কাজ জানেন কিন্তু অনলাইনে কাজ পাচ্ছেন না।
৩। যারা অনলাইনে দু-একটি কাজ করেছেন এরপর ফিডব্যাক, রেটিং খারাপ হওয়ায় কাজ পাচ্ছেন ন।

এই জরিপে যাদের যুক্ত করা হয়েছে, উনাদের অনেকগুলো দিক বিবেচনা করা হয়েছে এবং তাদের মনমানসিকতা বিচারের জন্য কেবলমাত্র ইশিখন.কম এর ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন পোস্ট-কারী এবং কমেন্টকারীদের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপের অংশ হিসেবে প্রথম ৪০০ জনকে তাদের যোগ্যতার জেনে পরীক্ষামূলক বিভিন্ন কাজ দেওয়া হয়।  তাদেরকে সম্পূর্ন স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাদেরকে প্রতিদিনি অনলাইনে নিদির্ষ্ট সংখ্যক কাজের করতে এবং তদারকি ইত্যাদির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু এটা জরিপ এবং তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার কতটুকু সামর্থ্য রাখেন এটি উক্ত পরীক্ষার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়, তাই তাদের কাজ তদারকি কিংবা তারা আদৌ কাজ করেছেন কিনা অথবা সমস্যায় পড়লে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য দেওয়া।
জরিপের ফলাফল:

এই জরিপে দেখা যায়, ৪০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৩ জন ব্যক্তি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন। বাকিদের মধ্যে-

১।  কেউ কেউ উক্ত কাজের বিস্তারিত না পড়েই বার বার প্রশ্ন করেন যে উত্তরগুলো জব ডেসক্রিপশনে বিস্তারিত বলা আছে।
২। কারো কারো প্রশ্ন শুনে এমনও মনে হয়েছে যে উনি কম্পিউটার বেসিকটাও এখনো ভালোমত জানেন না।
৩। কেউ কেউ কাজ জানেন কিন্তু কাজের প্রতি সিরিয়াস নয়, আজ করবো, আজ ব্যস্ত ইত্যাদি করে সময় কাটিয়েছেন।
৪। কেউ কেউ কাজটি করতে পারবেন না উপলদ্ধি করে নানা অজুহাত দেখিয়েছেন।
৫। কেউ কেউ কাজটি আগে নিয়েছেন পরে যখন দেখলেন পারবেন না, তখন ১০ দিনের জায়গায় ১ মাস সময় চেয়েছেন। অজুহাত হিসেবে পরীক্ষাসহ নানারকম কারণ দেখিয়েছেন।
৬। কেউ কেউ কাজ নিয়ে আর কোন প্রকার যোগাযোগই করেন নি।
৭। কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়ায় আপডেট দেওয়া হয়, উক্ত আপডেট না দেখেই বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
৮। কারো কারো ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলায়ও অনেক সমস্যা লক্ষ করা গেছে।

কিভাবে বুঝবেন? আপনি কাজ করার উপযুক্ত কিনা?

 

উক্ত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা অনলাইনে কাজের ব্যর্থতার পেছনে গুরুত্বপুর্ণ অনেকগুলো কারণ খুঁজে পেয়েছি।
নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
  • যেমন আপনি ওয়েব ডিজাইন জানেন, দাবি করেছেন। কিন্তু যখন আপনাকে প্রাকটিক্যালী একটা পিএসডি কিংবা জেপিজি ইমেজ দেখিয়ে বলা হল, এই সাইটটা করেন, যেটা করতে একজন পেশাদার ডিজাইনারের সবোর্চ্ছ ২/৩ ঘন্টা লাগবে। সেটা দেখানোর পর আপনি নানারকম অজুহাত, জেপিজি / পিএসডির নানারকম ত্রুটি বের করছেন। যেটা হাস্যকর। এর মানে আপনি কাজটি জানেন না। কিংবা দক্ষ নয়। এইচটিএমএল এর দু-একটা কমন ট্যাগ কিংবা সিএসএস  এর দু-একটা প্রোপার্টি জেনে ভাবছেন আপনি সব জানেন। **আপনি কাজের জন্য উপযুক্ত নন। ইশিখন.কম এর জরিপে এইধরণের লোকজনই উপরিক্ত ৪,৫,৬ নং কারণ দেখান।


সমাধান:
আপনি যে কাজ করবেন, উক্ত কাজের উপর আপনাকে পরিপূর্ন (আগা-গোড়া) ধারণা থাকতে হবে। উক্ত কাজে অবশ্যই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ নেওয়ার আগে আপনি যে কাজ জানেন উক্ত কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি ধরণের কাজ পোস্ট হয়, ওগুলো নিজে করার চেষ্টা করবেন। না পারলে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিন, কাজটা কিভাবে করা হয়েছে। অভিজ্ঞ কেউ না থাকলে আপনি যেখান থেকে শিখেছেন উনাদের কাছ থেকে সহায়তা নিন। ইশিখন.কম এ কোন কোর্স করা মানেই আপনি আজীবন মেম্বার। তাই উনাদের সহায়তা নিন। তাতে আপনি কোন বিষয় না জানলে সেটা জেনে নিন। লাগুক না ২/৩ ঘন্টার জায়গায় ১০/১৫ দিন। তবুও এটাই আপনার প্রফেশনাল কাজের একমাত্র মাধ্যম।

  • ফ্রিল্যান্সিং এ টাকা আর্ন করা যায় শুনে অনেকেই ভাবেন, একটা ল্যাপটপ কিনে আমিও আর্ন করবো। এজন্যেই ল্যাপটপ কেনার পরই ফ্রিল্যান্সিং শেখাতে দৌড়াদুড়ি শুরু করেন।

উনারা ভাবেন, ফ্রিল্যান্সিং মানে হল কোন একটা গোপন তালা, যার চাবি হল ল্যাপটপ। সেই গোপন তালাটা দেখিয়ে দিলেই উনিও চাবি দিয়ে খুলে ঝনঝন করে টাকা বের করে আনবেন। এন্ড এক্ষেত্রে ধান্দাকারী কিছু প্রতিষ্ঠানও দায়ি। যারা কাজের ধার ধারে না, ফ্রিল্যান্সিং এ সফল কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে শুক্রবারিক সেমিনার করেন, যার টিকেট হাজার টাকা। সেখানে সেমিনারের নামটা এমনভাবে দেন, যেন ঔই দুই-ঘন্টার প্রশিক্ষনেই রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দিবেন, আর অনলাইনে অল্পবিদ্যা অর্জনকারী কোটি টাকার স্বপ্নেবিভোর লোকজনও ঔই গোপন তালার সন্ধানে এইসব সেমিনারে পেছনেই সবসময় দোড়েন। আবার তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রানালয়ের তোষামদকারী কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে বিপুল টাকা নিয়ে এই স্বপ্নদেখা লোকজনকে চর্কারমত ঘোরাচ্ছে।
সরকারের টাকা পকেটে নিতে এরা এই ধরণের সেমিনার, সরকারকে টাকা কোথায় ব্যয় করেছে, তা দেখানোর জন্য মাসব্যাপী সেমিনার করছে, বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া পত্রিকা তাদের নিয়ে গজর্ন দেবে। আপনি এইসবে কান না দিয়ে কাজ শিখুন, এমন কোন ফ্রিল্যান্সার দেখান, যিনি বলবেন, আমি কিছুই শিখি নি, অমুক সেমিনারে অংশ নিয়ে পরের দিন আর্ন শুরু করেছি।
 
সমাধান: আপনি সবে মাত্র কম্পিউটারের  ক্লাস ১ এর মত অক্ষরজ্ঞান শিখছেন, রিডিংও পারেন না, আপনি কিভাবে চিন্তা করেন যে এই পড়াশুনা দিয়ে ব্যাংকে জব করে ৮০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করবেন? কম্পিউটার কিনে প্রথমত ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে দু মাসের বেসিক কোর্স কর হয়তো, আপনি বেসিক অনেক কিছুই জানেন। তবুও অনেক কিছুই আছে, যেটি জানেন না। যেমন: নিউ ফোল্ডার তৈরী করতে তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু দেখুন তো, কম্পিউটার বেসিক টিউটোরিয়ালের এই ভিডিওটিতে দেওয়া নিউ ফোল্ডার তৈরী আর আপনার জানা নিউ ফোল্ডার তৈরীর মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা? আশা করি যারা ভিডিওটি দেখছেন, উনারা বুঝতে পেরেছেন নিজেরা এখনো কতটুকু শেখার বাকি। তাই বলছি, কম্পিউটার কিনে অন্তত ১ বছর সময় নিয়ে যেকোন কাজ শিখুন।

  • ধরলাম, আপনি ভালোভাবে কাজ শিখেছেন, ফ্রিল্যান্সিং করতে এখন আপনার যেটা প্রয়োজন তা হল পেশাদারিত্ব। আর পেশাদারিত্ব তখনই হবে যখন আপনি উক্ত বিষয়ে সিরিয়াস হবেন। যেমন: আপনি ভাবলেন, ব্যাপারটা কেমন দেখা যাক কিংবা দেখিতো কিভাবে আর্ন করে। এইধরণের মানসিকতা কখনো প্রফেশনালিটি বহন করে না।

একটা ব্যবসা শুরু করতে কিংবা একটা অফিসে চাকরি করলে আপনাকে প্রথমত যোগ্য হতে হবে, কাজ জানতে হবে। এরপর নয়টা-পাঁচটা অফিসে যেতে হয়। অফিসের জন্য নাস্তা করে নির্ধারিত পোশাক পরে রেডি হতে হয়। অফিসে লেইট হলে গাড়িতে না যেয়ে অনেকসময় তিন-চারগুণ টাকা খরচ করে সিএনজিতে যেতে হয়। এটা কেন করেন?? যদি প্রশ্ন করি এইসব কেন করেন? উত্তর: নাস্তা না করলে ক্ষিদা লাগবে, অফিসের পোশাক পরে না গেলে কেউ সিরিয়াস ভাববে না, হাসাহাসি করবে, কাজের প্রতি দায়িত্বশীল ভাববে না। অফিসে দেরি হলে বসের ঝাড়ি, বেতন কাটা যাবে।.. ইত্যাদি।
তেমনি এখানেও আপনাকে সিরিয়াস হতে হবে।

সমাধান: ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য এখানে প্রাথমিক প্রস্তুতি আপনি সবই করলেন, কাজ শিখলেন, ল্যাপটপ আছে(পোশাক), ইন্টারনেট বিল দেওয়ার মত টাকা জমা আছে, (সিএনজি ভাড়া), আর অফিসের মত নিয়মিত সময় দিতে প্রস্তুত। এবার আপনি কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, সে বিষয়ে সত্যিকারের অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিন। আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট কর অফিসে বসের ভয়, কিন্তু এখানে ভয় নেই। এখানে কেউ আপনাকে খোঁচাবে না। তাই আপনাকেই এখানে নিজ দায়িত্বে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে।

  • এরপর যে এটি লক্ষনীয় তা হল, সময়ানুবর্তিতা। অফিসে যেমন কাজ না থাকলেও আপনাকে যেতে হয়, এখানেও তেমনি কাজ না পেলে ধৈর্য্যসহকারে আবেদন করে যেতে হবে। আবার বলছি, অনলাইনে সবাই কাজ করতে পারে না। তার কারণ হলো স্বনিয়ন্ত্রণতা কিংবা সেল্ফ কন্ট্রোল সবার মধ্যে থাকে না। যারা অফিসে বসের ঝাড়ির ভয়ে কাজ করেন কিংবা নিন্দুকেরা আপনাকে ইরেগুলার বলে তাদের এ পথে না আসাই ভালো।
  • অনলাইনে কাজ করার আরেকটি কাজ হলো কম্যুনিকেশন।ওডেস্কে ফোন নং কিংবা স্কাইপি আইডি দেওয়ার নিয়ম নেই। তবুও অনেকে স্কাইপি আইডি ক্লায়েন্টকে দেয়। ফোনে হাইরেটের কারণে কেউ সাধারণত ফোন নং দেয় না। তাই আপনার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অনলাইন। ধরুন ফ্রিল্যান্সিং থেকে আপনি একটি কাজ নিলেন। কথা ছিলো ২০ দিনের মধ্যে দিবেন। কিন্তু কাজটি আপনি জানেন, আপনি ১০ দিনেই শেষ করতে পারবেন। তাই ভাবলেন বাকি ১০ দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে মাস্তি করে কাটাই। কাজটি নিয়ে আপনি ঔই ২০ দিন আর অনলাইন হলেন না। কিন্তু ওদিকে ক্লায়েন্ট এর খুব গুরুত্বপুর্ন কারণে কাজটি ১৫ দিনে কমপ্লিট করতে হবে। তা না হলে তার হাজার ডলার ক্ষতি হবে। অথবা ক্লায়েন্ট এর কাজে গুরুত্বপূর্ন কোন পরিবর্তন করতে হবে। যেটি তার এখন মনে পড়েছে। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টে আপনাকে অনলাইনে না পেলে। তার ভীষণ অন্য কাউকেও হায়ার করে নিতে পারেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন হলো নিয়মিত অনলাইনে না হলে আপনি একটি কাজে আবেদন করলেন, ক্লায়েন্ট আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকলো, আপনি মত না থাকলে সে অবশ্যই অন্য কাউকে হায়ার করে নিবে।
  • কাজ করার মৌলিক যোগ্যতাগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো মেধা এবং সৃজনশীলতা। অনলাইনে ক্লায়েন্ট আপনাকে সবকিছু বলে দিবে না। কিছু কিছু কাজ আছে যেটি আপনি নিজের মেধা, সৃজনশীলতা দিয়ে করতে হয়। তাছাড়া কোন অংশ আপনি পারেন না, সেক্ষেত্রে আপনি গুগল সার্চ করে সমাধান করার মত মেধা থাকতে হবে।

আরো অনেক কিছু বলার ছিলো কিন্তু অনেক বড় আর্টিকেল হয়ে যায়, তাই আজ এ পর্যন্তই। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। আর অবশ্যই আপনাদের মতামত জানাবেন। আমিও আলোচনায় অংশ নিবো।

আরো পড়ুন:

ওয়েব ডিজাইন কি? কিভাবে শিখবেন ওয়েব ডিজাইন??

ওয়েব ডেভলপমেন্ট কি? কিভাবে শিখবেন ওয়েব ডেভলপমেন্ট??

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline