আসন্ন এইচএসসি প্রশ্নফাঁস রোধে উঠেপড়ে লেগেছে এবং পরীক্ষার কেন্দ্র বদলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

আসন্ন এইচএসসি প্রশ্নফাঁস রোধে উঠেপড়ে লেগেছে এবং পরীক্ষার কেন্দ্র বদলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

যেভাবেই হোক প্রশ্নফাঁস ঠেকাতেই হবে

এইচএসসি প্রশ্নফাঁস রোধে উঠেপড়ে লেগেছে এবং পরীক্ষার কেন্দ্র বদলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিষ্কণ্টক করতে উঠেপড়ে লেগেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ঠিক কোন পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধসহ নিষ্কণ্টক পরীক্ষা হবে তা খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক রকম টানাটানির মধ্যে কোপ পড়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রের ওপর। এমন কি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওপর নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড শুধু ঢাকা মহানগরীতেই ২১টি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র বদলে দিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে মাদ্রাসা বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বলেছে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমতি না দিতে। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত বর্তমান নীতিমালাকেও হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে রীতিমতো তেলেসমাতি কারবার শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কখনো বলছে, পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে ইন্টারনেট বন্ধ, পরক্ষণেই বলছে ইন্টারনেট বন্ধ সমাধান নয়। কখনও বলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ থাকবে। পরক্ষণেই নীরব শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে সব কটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার মধ্য দিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মাত্র কুড়ি দিন পর থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর কোনো উপায়ই এখনো বের করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে পরীক্ষার কয়েকটি কেন্দ্র বদলে দিয়েছে। জানতে চাইলে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্ল্যা বলেন, কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। বেশি কেন্দ্র হলে প্রশাসনিক আওতায় আনা কষ্টকর। এজন্য হয়তো মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে নতুন কেন্দ্র অনুমোদন না দেয়ার কথা বলেছে।

আইন অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের এখতিয়ার শিক্ষা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুব একটা নাক গলাতে পারে না। তবু চিঠি দিয়ে নতুন কেন্দ্র স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করাকে অনেকেই ভালো চোখে নেননি। এর মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকাণ্ডে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেছেন, অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কাজটা বোর্ডের। যার কাজ তাকেই করতে দেয়া উচিত।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী ২ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে। এরপর থেকে শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। চলবে ৪ মে পর্যন্ত। এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। গত ৩ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসকের পাঠানো ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে।

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার আগ ঢাকা মহানগরীতে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরে এই তালিকাটি সংশোধন করা হয়। সংশোধনী তালিকায় দেখা গেছে আগের প্রকাশিত তালিকা থেকে ২১টি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হওয়া কেন্দ্রেই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে হবে। তবে কেন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে সে বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা বোর্ডের কেন্দ্র তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে তেজগাঁও মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী তেজগাঁও মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষা দেবে তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে। শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ কেন্দ্রে ছিল বশির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র। কিন্তু এখন এই কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে। শুধু এই দুই কলেজের কেন্দ্রই নয়, ঢাকা মহানগরীর ২১টি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বদলানো হয়েছে।

ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কেন্দ্রের দুটি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অনেকটা নতুন কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রই পরিবর্তন হয়েছে। কেন্দ্র পরিবর্তন হওয়া কলেজগুলো হলো- তেজগাঁও মহিলা কলেজ, বশির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গ্রিনফিল্ড কলেজ, আল-হেরা কলেজ, হাজী আব্দুল আউয়াল কলেজ, খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজ, আল ফুরকান ইংলিশ হাইস্কুল এন্ড গার্লস কলেজ, ফজলুল হক মহিলা কলেজ, পাইওনিয়ার কলেজ, মোহাম্মদপুর আদর্শ কলেজ, উত্তরা পাবলিক কলেজ, ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল ও কলেজ, উত্তরা রেসিডেনসিয়াল কলেজ, নতুন পল্টন লাইন স্কুল ও কলেজ, কুইন্স কলেজ, কোডা কলেজ, ইমিনেন্স কলেজ, রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজ, কামারপাড়া স্কুল এন্ড কলেজ, ডেমরা কলেজ।

মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা কেন্দ্র

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে গত ৫ মার্চ চিঠি দিয়ে জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা কেন্দ্র থাকার পরও আরো বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা, শিক্ষার্থী সংখ্যা, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের সুব্যবস্থা, প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিবেচনায় নেয়া উচিত। এমতাবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত বর্তমান নীতিমালা হালনাগাদ করার জন্য প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

সদ্য শেষ হওয়া চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার বিষয় সংখ্যা বেশি হওয়ায় এইচএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কাও বেশি। কিন্তু এই গোপনীয়তা, পরীক্ষা কেন্দ্র বদলানোর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস কী ঠেকানো যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। হাইকোর্ট চলমান এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটির প্রতিবেদন পেলে প্রশ্নফাঁস রোধের কৌশল জানা যাবে।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে অনলাইনে নজরদারি

আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যাতে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে না পারে সেজন্য আগেভাগেই ইন্টারনেটে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের এসএসসি ও সমমানের প্রতিটি পরীক্ষার আগেই টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি করছে ফেসবুকের কয়েকশ গ্রুপ। এ রকম কিছু গ্রুপে ক্রেতা সেজে ঢুকে প্রশ্নপত্র কিনছেন গোয়েন্দারা। তারপর লেনদেনে ব্যবহৃত বিকাশ নম্বরের সূত্রে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন। গোয়েন্দারা মনে করছেন, ঠিক একই পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষার সময়ও অপারেশন চালাবেন। তবে উৎস সম্পর্কে এখনো জানতে না পারলেও পুলিশের ধারণা, পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই প্রশ্নফাঁসে জড়িত।

 

আরো পড়ুন:

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এইচএসসি পরীক্ষায় পরিবর্তন আসছে

প্রশ্নফাঁসে কে জড়িত, তার নাম বলুন, ব্যবস্থা নেব বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্য করুন

Need Help? Send a WhatsApp message now

Click one of our representatives below

Jannatul Ferdous
Jannatul Ferdous

Course Counsellor

I am online

I am offline

Md. Shamim Sweet
Md. Shamim Sweet

Course Counsellor

I am online

I am offline

Mehedi Hasan
Mehedi Hasan

Technical Support

I am online

I am offline

Rezaul Hasan Sarker
Rezaul Hasan Sarker

Course Counsellor

I am online

I am offline

Ariful Islam Aquib
Ariful Islam Aquib

Course Counsellor

I am online

I am offline

Syeda Nusrat
Syeda Nusrat

Course Counsellor

I am online

I am offline