আমেরিকায় শিক্ষক আন্দোলন বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মিছিল

আমেরিকার মতো দেশেও শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছেন না। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন শিক্ষকদের বেতন কিছুটা বাড়ালেও তাকে যথেষ্ট মানছেন না শিক্ষকেরা। আর এ জন্যই সম্প্রতি অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের শিক্ষকেরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মিছিল করেছেন। শিক্ষকদের এই দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। বেতন বৃদ্ধির এই আন্দোলন নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শিক্ষকদের মধ্যেও সঞ্চার হচ্ছে।

বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন আমেরিকার শিক্ষকেরা। অর্থনৈতিকভাবে আকর্ষণীয় না হওয়ায় আমেরিকার নতুন প্রজন্মের মেধাবীরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অভিবাসীদের মধ্যেও পেশাটি জনপ্রিয় নয়। বিশেষত অঙ্ক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক সংকটে ভুগছে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের স্কুল বোর্ডগুলো। অনেকেই যথেষ্ট যোগ্যতা থাকার পরও শিক্ষকতার পেশায় আসছেন না। আর এরই মধ্যে যারা এই পেশায় যুক্ত আছেন তারা নেমেছেন রাজপথে বেতন-ভাতা ও চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে।

জাতীয় শিক্ষা গবেষণা দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষকদের বার্ষিক গড় বেতন ছিল ৫৮ হাজার ৯৫০ ডলার। আমেরিকার বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে শিক্ষকদের বার্ষিক গড় বেতন এখনো ৫০ হাজার ডলারের নিচে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও এনওআরসির যৌথ জনমত জরিপ বলছে, ৭৮ শতাংশ মানুষ মনে করে শিক্ষকদের যথেষ্ট বেতন দিচ্ছে না আমেরিকা। শিক্ষকদের বর্তমান বেতন কাঠামোকে মোটামুটি ভালো মনে করেন ১৫ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আমেরিকান মনে করেন শিক্ষকদের বর্তমান বেতন কাঠামো যুগোপযোগী নয়। এই কাঠামো সংস্কার করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এরই প্রমাণ পাওয়া গেল সম্প্রতি অ্যারিজোনায়। সেখানকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির মিছিলে বহু সাধারণ মানুষ এসে যোগ দেন।

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মত হলো, শিক্ষকেরাই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ তৈরির কাজটি করেন। এই শিক্ষকরাই বেতন-ভাতা কম পেলে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। কারণ সে ক্ষেত্রে অনেক মেধাবী এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, যার নজির এখনই দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে।

সম্প্রতি শিক্ষকদের বেতন ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু একে যথেষ্ট মনে করছেন না শিক্ষকেরা। গত সপ্তাহে অ্যারিজোনাতে এর বিরোধিতা করে হাজার হাজার শিক্ষক ধর্মঘটের ডাক দেন। তাদের মতে, ২০ শতাংশ বেতন বাড়লেও ওই বর্ধিত বেতন কর ও ভ্যাটমুক্ত নয়। ফলে এই বৃদ্ধি সার্বিক বেতন-কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন আনেনি।

শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য ধর্মঘটের এই ডাক প্রথমে শুরু হয়ে পশ্চিম ভার্জিনিয়া থেকে। পরে সেটা দ্রুতই ওকলাহোমা, কেনটাকি কলোরাডো ও অ্যারিজোনাতে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে বেশ কথা-বার্তা হচ্ছে অভিভাবক মহলে। এপির জরিপের তথ্যমতে, ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করে, শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে ফেডারেল সরকারকে আরও বেশি কর দিতে হলে তাও দিতে প্রস্তুত তারা।

নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শওকত আলীর মতে, যদি নিউইয়র্কের মতো শহরে কেউ বার্ষিক ৫০-৬০ হাজার ডলার আয় করেন, তিনি এক প্রকার হোমলেসদের মতোই। কারণ মাসিক ঘর ভাড়া, অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে এমন আয়ের কারও পক্ষেই কোনো সঞ্চয় করা সম্ভব নয়। এই বেতন, অন্য অঙ্গরাজ্যে, যেখানে ঘরভাড়া ও জীবন ধারণের ব্যয় খুব বেশি নয়, সেখানে চলার মতো।

নিউইয়র্কে শিক্ষকদের বেতন সন্তোষজন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অন্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় এখানে ভালো। কারণ এই অঙ্গরাজ্য ও শহরে শহরে শিক্ষকদের ইউনিয়ন বেশ শক্তিশালী। তারা নিজেদের পক্ষে দাবি আদায়ে অনেকটাই সক্রিয়।

নিউইয়র্কের একটি পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন সাদিয়া খন্দকার। তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের বেতন ধার্য হয় নিয়োগের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সনদের নিরিখেই। এর পর সেখান থেকে এক লাফে বড় বেতনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি স্কুল বদলালেও এমন সুযোগ নেই। তবে প্রতি বছরই একটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। কিন্তু বছর বছর এই বেতন বৃদ্ধি একেবারেই নগণ্য। শিক্ষকতা যেহেতু একটি সম্মানিত পেশা, তাই এই পেশার মানুষদেরকে তার প্রাপ্যটা দেওয়া উচিত।

সাদিয়া খন্দকার বলেন, শিক্ষকতা সম্মানজনক পেশা হলেও, এতে বঞ্চনাও কম নয়। এখানে একজন নারী তার মাতৃত্বের জন্য সর্বোচ্চ আট সপ্তাহের ছুটি পান। সেটাও আবার বিনা বেতনে। অথচ ওই সময়টাতে হয়তো তার অর্থের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সব দিক মিলিয়ে শিক্ষকদের দেশব্যাপী বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনকে যৌক্তিকই বলেই মনে করি আমি।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline