
৩০ শতাংশ কোটাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সব সুবিধা বহাল রাখার দাবি।
৩০ শতাংশ কোটাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সব সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) শাহবাগে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে এ দাবি জানানো হয়। সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজিত এই গণঅবস্থানে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
একই দাবিতে আগামী ৬ মে সকাল ১০টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম।
গণঅবস্থানে বক্তারা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ৭৫ খ্রিস্টাব্দে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারো ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটায় কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিস্পেষিত হয়েছে। এ ছাড়া এই ৩০ শতাংশ কোটা তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরি।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সরকারি কোটা থাকলেও এই কোটায় যোগ্যতার দোহাই দিয়ে ইচ্ছাপূর্বক তাদের মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রিলিমিনারী, লিখিত, মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার আর কি যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে? মৌখিক পরীক্ষা কখনোই যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র মানদন্ড হতে পারে না। বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যায় না। অথচ এখনো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকারত্ব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের আহবায়ক আশিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্য আলী রেজা, মাহবুবুল আলম, নোবেল খান পাঠান, অভিজিৎ সরকার, মোবারক হোসেন ও মনিরা আক্তার।গণঅবস্থানে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম জামাল উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন ড. কাজী সাইফুদ্দীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ এস এম সাদাত হোসেন, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক কার্টুনিস্ট কামাল পাশা চৌধুরী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন, দপ্তর সম্পাদক আহমাদ রাসেল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আল-মামুন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের কাজী রুবেল, নিজামউদ্দিন বাঘা ও আজিজ চৌধুরী।
গণঅবস্থানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো:
১) মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে,
২) ৩০ শতাংশ কোটাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে,
৩) বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে,
৪) জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সকল প্রকার সরকারি চাকরি থেকে বহিষ্কার ও তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যারা অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে,
৫) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্র পদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং
৬) সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের তালিকা আলাদাভাবে প্রকাশ করতে হবে।
আরো পড়ুন: