পাহাড়ে চাষাবাদে সহায়তায় এগিয়ে আসছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা

পাহাড়ে চাকমা পল্লীর স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা পারিবারিক চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ের সহায়তায় এগিয়ে আসছে। গৃহস্থালীর কাজসহ বিভিন্ন কাজে চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা ব্যস্ত থাকলেও স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের সব কাজে তেমন একটা দেখা যায় না।

পাহাড়ে চাকমা পল্লীর স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা পারিবারিক চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ের সহায়তায় এগিয়ে আসছে। গৃহস্থালীর কাজসহ বিভিন্ন কাজে চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা ব্যস্ত থাকলেও স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের সব কাজে তেমন একটা দেখা যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে স্কুল-পড়ুয়া মেয়েদেরও মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

উপজেলার হোয়াইক্যং পাহাড়ি জনপদ হরিখোলায় গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। নারী সদস্যসহ সবাই মিলে চাষ করছে এমন একটি পরিববারের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায়, স্থানীয় গইজ্জা অং চাকমা (৬০) এবং মিয়াং ছিং চাকমা (৫০)-র সংসারে ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। দরিদ্র মা-বাবার সংসারে আর্থিক সংকটের কারণে জীবিকার তাগিদে বেশি জমি চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। সম্পত্তি কম বলে দরিদ্রতার কারণে বড় ছেলেদের পড়াশুনা বেশিদূর করাতে পারেননি পরিবারের কর্তা। বড় হয়ে দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করে। বাড়ির ছোট ছেলে মা-বাবার স্বপ্নে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে। সে হোয়াইক্যং আলহাজ আলী-আছিয়া হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

বড় মেয়ে পাপুরী চাকমা বাবা-মাকে গৃহস্থালী কাজে সহায়তা করছে। পরিবারের মেজ মেয়ে মেঘনা চাকমা (১৭) হোয়াইক্যং আলহাজ আলী-আছিয়া হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে প্রকাশি চাকমা (১২) হরিখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। ব্যয়বহুল শ্রমিকের মজুরী জোগাড় করতে না পেরে এই স্কুলপড়ুয়া মেয়েরাই বীজ চারা উত্তোলন করে ধান-ক্ষেতে গিয়ে নিজেরাই বপন করতে দেখা গেছে। চলতি রবি মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে খোরাকের জন্য ধান চাষাবাদ শুরু করে পরিবারটি। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে মা-বাবাকে এই দুই বোনের অব্যাহত সহায়তা পুরো চাকমা পল্লীর মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

এই বিষয়ে স্কুলছাত্রী মেঘনা চাকমা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন, আমরা গরিব ঘরের ছেলে-মেয়ে। অবসর ও পড়াশুনার ফাঁকে নিজ পারিবারিক কাজে সহায়তা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি। স্থানীয় অভি চাকমা জানান, আমাদের চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা এমনিতে পরিশ্রমী। কিন্তু স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের কাজ করতে তেমন দেখা যায় না। এই পরিবারের স্কুলপড়ুয়া মেঘনা ও প্রকাশি চাকমা মা-বাবাকে পারিবারিক চাষাবাদের কাজে সহায়তা করে নতুন একটি পথ খুলে দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসসূত্র জানায়, চলতি বছর রবি মৌসুমে ১৩শ ২০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত এই জমিতে বিরি-৪৭, ২৮, বিরি-২১, বিনা-৮৮ প্রজাতির ধানের চাষাবাদ হয়। কৃষকরাও উত্সাহী হয়ে জমিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাজ করছে শুনে ভালো লাগছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, চাকমা মেয়েরা এমনিতেই বেশ কর্মঠ। তার ওপর স্কুলে অধ্যয়নের পর মা-বাবাকে কৃষি কাজে সহায়তা সত্যিই প্রশংসনীয় ব্যাপার। আমরা ধান, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের চাষে সবাইকেই উত্সাহ দিয়ে থাকি।

   
   

0 responses on "পাহাড়ে চাষাবাদে সহায়তায় এগিয়ে আসছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2025. All Right Reserved